• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিগুণে অনন্য ‘তেঁতুল’

পুষ্টিগুণে অনন্য ‘তেঁতুল’

ফিচার ডেস্ক

জিভে পানি আসার মতো একটি ফলের নাম মনে করুন তো। কি, মনে করতে পেরেছেন? অনেক ফলই তো আছে, যার নাম শুনলেই জিভে পানি এসে যায়। তবে এমন একটি ফল আছে যার নাম শোনা মাত্রই জিহ্বা পানিতে লকলক করে। আর সেই ফলটির নাম ‘তেতুল’। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ও রান্নার সংস্কৃতিতে তেতুল জড়িয়ে আছে আষ্ঠেপৃষ্ঠে।

তেঁতুল শুধু একটি ফলই নয়। বরং এর রয়েছে ভেষজ গুণাগুণ। সেই সঙ্গে পুষ্টিগুণেও তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক তেঁতুলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-

পরিচয়

তেঁতুলের ইংরেজি নাম Tamarindus indica। এটি Fabaceae পরিবারের অন্তর্ভূক্ত একটি ফল। এটির আদি নিবাস আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল। দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে মূল্যবান খাবারের মধ্যে তেঁতুল অন্যতম। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় এটিকে তেতৈ আর নোয়াখালীতে বলে তেতি। আদিবাসীরাও তেঁতুলকে বিভিন্ন নামে ডাকে। মারমাদের ভাষায় হাও মং এবং রাখাইনরা এটাকে বলে তাতু।

তেঁতুলের আয়ুর্বেদিক নাম যমদূতিকা। এটি দীর্ঘজীবী বৃক্ষ। বাংলাদেশের সব অঞ্চলে তেঁতুল গাছ জন্মে। তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৯ সালে পাহাড়ি এলাকায় চাষ উপযোগী বারি তেঁতুল-১ নামে একটি মিষ্টি তেঁতুলের জাত উদ্ভাবন করেছে।

পুষ্টিগুণ

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, তেঁতুলে রয়েছে চমকপ্রদ পুষ্টি উপাদান। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন বি, ক্যালরি, আয়োডিন, আয়রন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে রয়েছে-

ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম
আয়রন ১০.৯ মিলিগ্রাম
আমিষ ৩.১ গ্রাম
চর্বি ০.১ গ্রাম
ভিটামিন বি ০.০৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই ০.১ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ১১৩ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ২৮ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ৬২৮ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৯২ মিলিগ্রাম
সিলিনিয়াম ১.৩ মিলিগ্রাম
দস্তা ০.৮৬ মিলিগ্রাম এবং
ক্যালরি ২৮৩ কিলোক্যালরি।

উপকারিতা

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেঁতুল খেলে-

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে : তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এতে আছে ভিটামিন সি ও আয়রন। যা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

প্যারালাইসিস থেকে উপশম : প্যারালাইসিসের কারণে অবশ হয়ে যাওয়া হাত পা ও অঙ্গের অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে তেঁতুল খুবই কার্যকরী। নিয়মিত তেঁতুল খেলে প্যারালাইসিস রোগীর অনুভূতি শক্তি বৃদ্ধি পায়।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে : তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর টারটারিক অ্যাসিড। উপাদানটি হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে এটি পেট ফাঁপা ও বদহজম সমস্যার সমাধান করে।

কাশি দূর করে : পুরনো কাশি নিরাময়ে তেঁতুল বেশ কার্যকরী। পানিতে পরিমাণ মতো লবণ, গুড় ও তেঁতুল মিশিয়ে পান করলে কাশি নিরাময় হয়।

হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে : বুক ধড়ফড় করা ও হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে নিয়মিত তেঁতুল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার।

হাত-পা জ্বালা বন্ধ করে : হাত-পা জ্বালাপোড়া করার সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা নিয়মিত তেঁতুল পানি খেতে পারেন। উপকার পাবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : তেঁতুলে থাকা পুষ্টি উপাদান হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তারা নিয়মিত তেঁতুল গোলানো পানি পান করতে পারেন।

প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : তেঁতুলে রয়েছে এমন কিছু খনিজ উপাদান, যা দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট বের করে দেয়। ফলে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ক্ষত নিরাময় করে : তেঁতুল গাছের পাতা ও ছালে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। এটি দেহের ক্ষত সারাতে খুবই কার্যকরী।

সতর্কতা

তেঁতুল উপকারী হলেও এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার নিবন্ধে বলা হয়েছে, তেঁতুল রক্তপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এছাড়া এটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে রক্তের সিরাম গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। কাজেই প্রতিদিন ১০ গ্রামের বেশি তেঁতুল খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য যারা তেঁতুল খান, তারা অবশ্যই এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গবেষণা বলছে, তেঁতুল অনেকের দেহে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। শরীরে চুলকানি ইনফ্লামেশন, বমি হওয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এছাড়া বেশি পরিমাণে তেঁতুল খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে এটি পিত্ত পাথর গঠন করে পেটে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই মারাত্মক রোগে আক্রান্তদের তেঁতুল খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস), আনন্দবাজার ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:১৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।