• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তেলাকুচার তেলেসমাতি

তেলাকুচার তেলেসমাতি

ফিচার ডেস্ক

তেলাকুচা খুবই পরিচিত একটি উদ্ভিদ। এটি লতা জাতীয় গাঢ় সবুজ রঙের পাতা বিশিষ্ট একটি গাছ। এর ফুল সাদা এবং এর ফল পাকলে টকটকে লাল রঙ ধারণ করে। ভেষজগুণে সমৃদ্ধ তেলাকুচা দেশের সব এলাকাতেই পাওয়া যায়।

গ্রাম-বাংলার বনে-জঙ্গলে, রাস্তার পাশে, ঝোঁপে-ঝাড়ে এই উদ্ভিদটি জন্মে। তেলাকুচির পাতা ও ডগা খাদ্য হিসেবে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এছাড়া এটির ফল ও শেকড় ভেষজগুণে ভরপুর। কাজেই সুস্থ থাকতে ও রোগ নিরাময়ে তেলাকুচি দারুণ একটি প্রাকৃতিক উপাদান।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক তেলাকুচির পুষ্টিগুণ ও ভেষজ গুণাগুণ সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।

পরিচয়

তেলাকুচা এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। এটির বোটানিক্যাল নাম Coccinia grandis বা Coccinia Cordifolia Cogn। এর ভেষজ নাম Coccinia। তেলাকুচার প্রচলিত নাম তেলাকুচা, তেলাকুচো ও কুন্দ্রি শাক। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটিকে কুচিলা, তেলা, তেলাকুচ, তেলাচোরা, কেলাকুচ নামেও ডাকা হয়। নেপালে বলা হয় গোল কানক্রি। এর ইংরেজি নাম scarlet gourd, baby watermelon, little gourd বা gentleman's toes।

পুষ্টিগুণ

তেলাকুচা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, আঁশ, প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন সি। এছাড়া তেলাকুচা বিটা-ক্যারোটিনে ভরপুর একটি প্রাকৃতিক উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম তেলাকুচাতে রয়েছে-
প্রোটিন ১.২ গ্রাম
আয়রন ১.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ ০.০৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১ ০.০৭ মিলিগ্রাম
আঁশ ১.৬ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন সি।

উপকারিতা

কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘এই সময়’, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, তেলাকুচা-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের স্বাস্থ্যের জন্য তেলাকুচা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তেলাকুচার ডগা ও পাতার রস খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন সকাল-বিকাল তেলাকুচার রস পরিমিত পান করুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

জন্ডিস নিরাময় : জন্ডিসে আক্রান্ত হলে অনেকেই আতঙ্কে ভুগেন। তবে ভেষজ চিকিৎসার উৎকর্ষতার এই আধুনিক যুগে জন্ডিস নিরাময়ে অনেকেই তেলাকুচা পাতার রসের ওপর ভরসা করে থাকেন। জন্ডিস সারাতে প্রতিদিন সকালে আধা কাপ তেলাকুচা পাতার রস পান করুন। জন্ডিস পালাবে।

পা ফোলা রোগ নিরাময় : পা ফোলা বা শোথ রোগ নিরাময়ে তেলাকুচি খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন তেলাকুচার মূল ও পাতা ছেঁচে নিয়ে এর ৩/৪ চা চামচ রস নিয়মিত সকাল-বিকাল পান করুন। পা ফোলা দূর হবে।

শ্বাসকষ্ট দূর করে : যারা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাদের জন্য তেলাকুচা যেন আশির্বাদ। বুকে কফ জমে থাকা ও কাশি নিরাময়েও এটি কার্যকরী। তবে হাঁপানি রোগ নিরাময়ে তেলাকুচার কার্যকারিতা তেমন পাওয়া যায়নি।

বুকের দুধ বৃদ্ধি : প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে তেলাকুচা ব্যাপক সহায়তা করে। তেলাকুচা ফলের রস হালকা গরম করে মধু মিশিয়ে পান করলে বুকের দুধ বৃদ্ধি পায়। এটি সকাল-বিকাল খেতে পারেন।

ত্বকের সুরক্ষা : ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তেলাকুচা খুবই কার্যকরী। এটি ফোঁড়া ও ব্রণ দূর করতেও সহায়তা করে। তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেঁচে ফোড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ব্যবহার করুন। উপকার পাবেন।

আমাশয় দূর করে : যারা পুরনো আমাশয়ে ভুগছেন, তারা নিয়মিত তেলাকুচার মূল ও পাতার রস সকাল-বিকাল ৩/৪ চা চামচ পরিমাণ খান। আমাশয় দূর হবে।

তথ্যসূত্র : এই সময়, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:০৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।