• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘কাঁচা হলুদের অবিস্মরনীয় ভেষজ গুণাগুণ’

‘কাঁচা হলুদের অবিস্মরনীয় ভেষজ গুণাগুণ’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ। বিয়ের সাঁজে সাঁজবে কন্যা, নরম গরম বউ রে।’ জনপ্রিয় বিয়ের গানের এই দুই লাইনে ফুটে উঠেছে কাঁচা হলুদের কদর। ত্বক উজ্জ্বল করতে কিংবা বিয়ের পাত্রীকে ফিটফাট রাখতে হলুদের ব্যবহার বহু পুরনো। এতো গেল গায়ে হলুদের গল্প। কাঁচা হলুদের জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এখন গুঁড়া হলুদ ব্যবহার হলেও আগে কাঁচা হলুদ পিষে রান্নায় ব্যবহার করা হতো। এখনো কোথাও কোথাও কাঁচা হলুদ পিষে রান্নায় ব্যবহারের প্রচলন অব্যাহত রয়েছে।

প্রিয় পাঠক বুঝতেই পারছেন এবারের পর্বে আপনাদের জন্য কাঁচা হলুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাই আর দেরি নয়, চলুন দেখে নিই কী আছে কাঁচা হলুদে-

পরিচয়

এটি মূলত হলুদ বা হলদি নামে পরিচিত। এটি আদার মতো গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Curcuma longa। হলুদ গাছের একধরণের শিকড়। হলুদের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া হলেও তা এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই চাষ হচ্ছে। রান্নার কাজে কাঁচা হলুদ ও হলুদের গুঁড়া ব্যবহারের প্রচলন সুপ্রাচীন।

পুষ্টি উপাদান

জি নিউজ, জাতীয় কৃষি তথ্য সার্ভিস (বিডি) ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের জাতীয় তথ্য বাতায়ন বলছে, হলুদে রয়েছে ক্যালরি, প্রোটিন, শর্করা, আঁশ, সুগার, আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাঙ্গানিজ।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদে রয়েছে-
প্রোটিন ০.৯১ গ্রাম
শর্করা ৬.৩১ গ্রাম
সুগার ০.৩ গ্রাম
চর্বি ০.৩১ গ্রাম
আঁশ ২.১ গ্রাম
ক্যালরি ২৯ কিলোক্যালরি
ভিটামিন সি ৩ শতাংশ
পটাশিয়াম ৫ শতাংশ
আয়রন ১৬ শতাংশ এবং
ম্যাঙ্গানিজ ২৬ শতাংশ।

কাঁচা হলুদের উপকারিতা

কাঁচা হলুদে রয়েছে অসংখ্য উপকারী উপাদান। যা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। ভারতীয় জি নিউজের স্বাস্থ্য বিষয়ক নিবন্ধে হলুদের বেশ কিছু জাদুকরি উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, কাঁচা হলুদ খেলে-

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা উপশম হয় : কাঁচা হলুদে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি আর্থ্রারাইটিস থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখে।

বাত, শিরা ব্যথা নিরাময় : কাঁচা হলুদ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকাল ও রাতে পান করুন। কয়েকবার এটি খাওয়ার পরেই ব্যথা ও যন্ত্রণা দূর হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাঁচা হলুদের ভূমিকা ব্যাপক। এতে থাকা খনিজ উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

হজমশক্তি বাড়ায় : পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা কমে গেলে পেটে অ্যাসিডিটি বেড়ে যায়। দেখা দেয় শারীরিক অসুস্থতা। কিন্তু কাঁচা হলুদ খেলে পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বা হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা : বলিরেখা, বয়সের ছাপসহ ত্বকের যে কোনো ধরণের সংক্রমণ নিরাময়ে কাঁচা হলুদ খুবই কার্যকরী। এছাড়া মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করতেও হলুদের জুড়ি মেলা ভার।

ওজন কমায় : দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী এক ধরণের টিস্যূ। কাঁচা হলুদ খেলে এই টিস্যূগুলোর বৃদ্ধি ঠেকানো যায়। ফলে ওজন কমতে শুরু করে।

লিভার সুরক্ষিত রাখে : কাঁচা হলুদের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান লিভারের বহুবৃদ্ধি রোধ করে। এছাড়া হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস ও গ্লাডারের সমস্যা নিরাময় করে।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে : কাঁচা হলুদ দেহের রক্তকোষ ও কোলেস্টেরলবাহী তন্তুকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে রক্তনালী উন্মুক্ত থাকায় রক্ত চলাচলের প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : কাঁচা হলুদে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তকণিকা নিরাপদ রাখে। ফলে এটি নানা ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

ফুসফুস শক্তিশালী করে : শ্বাসক্রিয়া শক্তিশালী করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে কাঁচা হলুদে থাকা ‘কারকিউমিন’। এই উপাদানটি অ্যালার্জি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, কাশি ও ঠান্ডা নিরাময়ে জাদুর মতো কাজ করে।

মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করে : কাঁচা হলুদে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য আদান-প্রদানের পরিমাণ বাড়ায়।

লিউকেমিয়ার ঝুঁকি কমায় : শিশুদের লিউকেমিয়ার ঝুঁকি কমাতে কাঁচা হলুদ খুবই কার্যকরী।

কিভাবে খাবেন কাঁচা হলুদ

বাজারে পাওয়া গুঁড়া হলুদ ভুলেও খাবেন না। এতে ক্ষতিকর ও রাসায়নিক উপাদান মেশানো থাকতে পারে। তাই কষ্ট করে কাঁচা হলুদ খুঁজে বের করে তা পিষে সংরক্ষণ করতে পারেন। এছাড়া ছোট ছোট টুকরো করে কাঁচা হলুদ সংরক্ষণ করতে পারেন।

কাঁচা হলুদ কতটুকু খাবেন

ভারতীয় জি নিউজে প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষকরা জানিয়েছেন, একজন ব্যক্তি দিনে ৫০০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম হলুদ খেতে পারবেন। তবে তা প্রতিবার ২৫০ মিলিগ্রামের বেশি হতে পারবে না। ভালো ফল পাওয়ার জন্য সকালে খালি পেটে হলুদ খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত কাঁচা হলুদ খেলে ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।

পরামর্শ

চিকিৎসকরা বলছেন, হলুদ রক্ত পাতলা রাখে বলে গর্ভাবস্থায় খুব বেশি না খাওয়াই ভালো। এছাড়া যাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা আছে, তারাও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হলুদ খাওয়া উচিত।

তথ্যসূত্র- কৃষি তথ্য সার্ভিস (বিডি), হেলথলাইন, জি নিউজ ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:১২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।