ব্লাড ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করবে বাংলাদেশি গবেষকের ওষুধ
ফাইল ছবি
ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য কার্যকর ওষুধ নিয়ে পিএইচডি করেছেন ড. মো. মাহবুব হাসান। যুক্তরাজ্যে তাঁর এ গবেষণা কাজটির পেটেন্ট বা মেধাস্বত্ব করিয়েছে কিংস কলেজ লন্ডন। বাংলাদেশের উদীয়মান এই গবেষক তাঁর গবেষণা ও পেটেন্ট সম্পর্কে দৈনিক আমরাই বাংলাদেশকে জানিয়েছেন। সম্প্রতি আমরাই বাংলাদেশ এর স্টুডিওতে তিনি এ সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে ড. হাসান জানান, ড্রাগ ডিসকভারি প্রজেক্ট এ কাজ করলেই কেউ প্রথমেই কোনো মেডিসিন বা ড্রাগ হুট করেই আবিষ্কার করে ফেলেন না। সাধারণত, প্রচলিত মেডিসিনের ওপর ভিত্তি করেই নতুন মেডিসিন এর প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়।
ড. হাসান বলেন, কেউ যদি একেবারেই নতুন কোনো মেডিসিন আইডিয়া থেকে তৈরি করতে চায়, তাহলে সেটির অনুমোদন, উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অনেক সময় লেগে যায়। কারণ এই নতুন ড্রাগটি জীবদেহে কেমন আচরণ করবে তা সম্পর্কে কোন পূর্বধারণা থাকে না। এজন্যই আমরা যারা নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করি, সাধারণত, আমরা ব্যাকগ্রাউন্ড এ একটি রেফারেন্স ড্রাগ রেখে সেটাকে মোডিফাই বা রুপান্তর বা উন্নয়ন করতে সচেষ্ট হই।
তিনি বলেন, একটা মেডিসিনের স্ট্রাকচার বা প্যাটার্ন এ পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে নতুন ও অধিকতর কার্যকরী ঔষধ তৈরি করা হয়। আমার পিএইচডি এরকমই একটি বিষয়ে ছিল। আমি মূলত, মেডিসিন্যাল কেমিস্ট্রি ব্যবহার করে একটি বাণিজ্যিক ঔষধের মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেছি। গবেষণায় আমি এমন একটি ওষুধ বেছে নিয়েছিলাম, যেটি ক্যান্সারের ঔষধ হিসেবে ইতোমধ্যে বাজারে বিদ্যমান।’
ড. হাসান তাঁর গবেষণার বর্ণনা দিতে গিয়ে সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ‘আমি যে ড্রাগকে মোডিফাই করেছি, সেটি মূলত লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই ওষুধের মূল রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে করে আমরা দেখতাম নতুন কোন স্ট্রাকচারটি ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে বেশি কার্যকরী। এরপর আমরা সেটিকে অধিকতর গবেষণার জন্য নির্বাচন করতাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচিত নতুন ড্রাগ পরবর্তীতে স্বীকৃত ল্যাব এ পাঠানো হতো জীবদেহে সেটি কতটুকু নিরাপদ তা নির্ণয় করার জন্য। আমাদের ড্রাগ এর নতুন রাসায়নিক গঠনের জন্য আমরা যখন দেখতে পেয়েছি যে এটা মূল রেফারেন্স ড্রাগ এর চাইতে কার্যকরী এবং নিরাপদ, তখনই সেটার জন্য মেধাসত্বের বা পেটেন্ট এর জন্য আবেদন করা হয়।
পেটেন্ট প্রসঙ্গে ড. মো. মাহবুব হাসান বলেন, ‘আমরা যখন বাইরে পিএইচডি করতে যাই, তখন প্রতিষ্ঠানের (কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়) সঙ্গে একটি সাক্ষরিত চুক্তি হয়ে যায়। যেখানে লেখা থাকে, নতুন প্রজেক্ট থেকে যদি কিছু আবিষ্কার বা সৃষ্টি হয়, তবে সেটির মেধাস্বত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে হবে। কিন্তু সেখানে ইনভেন্টর বা আবিষ্কারক হিসেবে প্রজেক্টে যুক্ত গবেষকের নামই থাকে।’
গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন- ‘আমরা এরকমই একটি ড্রাগ উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি, যা ২০২১ সালে বাজারে আসার অনুমোদন পায়। ব্লাড ক্যান্সারের সেই ঔষধটির রাসায়নিক গঠন তুলনামূলক ভাবে বেশ বড়। আমরা সেটাকে ছোট করার চেষ্টা করেছি (৩০-৪০%)। এতে করে নতুন ড্রাগটির রাসায়নিক গঠন ছোট হয়েছে এবং সেই সঙ্গে এই ড্রাগটি ক্যান্সারের সেল বা কোষ ধ্বংস করার ক্ষমতা বজায় রেখেছে।’
উল্লেখ্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মো. মাহবুব হাসান ১৯৮৭ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৃত আব্দুল মতিন ও মাতার নাম হাসিনা মমতাজ। তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ থেকে স্নাতক (বিএসসি) ও স্নাতকোত্তর (এমএসসি) ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ২০১৯ সালে কিংস কলেজ লন্ডন এর (ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-৩৮) ইন্সটিটিউট অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স এ কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি গবেষণা শুরু করেন, এবং ২০২৪ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে শিক্ষকতা করছেন ড. মো. মাহবুব হাসান।