• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিকর পালং শাকের গুণাগুণ

পুষ্টিকর পালং শাকের গুণাগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। দুমাস পরেই শীত শুরু। কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতের শাক-সবজি। শীতকালীন শাক-সবজির মধ্যে পালং শাক অন্যতম। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় একটি শাক। এতে রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান ও খনিজ উপাদান।

‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য আমরা এই পর্বে পালং শাকের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নিই, কি আছে পালং শাকে-

পরিচয়

পালং শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Spinacia oleracea। এটি এমারান্থাসি পরিবারভুক্ত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর আদি উৎপত্তি মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। এটি একবর্ষজীবি উদ্ভিদ।

উপাদান

পুষ্টি গবেষকরা বলছেন, পালং শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল। বিশেষ করে এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি২, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার ও প্রোটিনসহ নানা উপকারী উপাদান।

উইকিপিডিয়ার বলছে প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে রয়েছে-

খাদ্যশক্তি ২৩ কিলোক্যালরি
আঁশ ০.৭ গ্রাম
কার্বোহাইট্রেড ৩.৬ গ্রাম
শর্করা ০.৪ গ্রাম
প্রোটিন ২.২ গ্রাম
ভিটামিন এ ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি ২৮ মিলিগ্রাম
লিউটিন ৫৬২৬ মাইক্রোগ্রাম
ফোলেট ১৯৬ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন কে ৪৬৩ মাইক্রোগ্রাম
পটাশিয়াম ২০৮ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৯৯ মিলিগ্রাম
নিকোটিনিক অ্যাসিড ০.৫ মিলিগ্রাম
রাইবোফ্লোবিন ০.০৮ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ০.০৩ মিলিগ্রাম
অক্সালিক অ্যাসিড ৬৫২ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২০.৩ মিলিগ্রাম
আয়রন-১১.২ মিলিগ্রাম এবং
বিটা ক্যারোটিন।

উপকারিতা

কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, পালং শাক খেলে-

ওজন কমে : এই শাকে রয়েছে প্রচুর আঁশ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। এসব উপাদান ওজন কমাতে সহায়তা করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে : পালং শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। যা দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

দেহে সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে : পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। এই খনিজ উপাদানটি দেহে সোডিয়াম বা লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে।

রক্তচাপ কমায় : এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। এছাড়া এতে রয়েছে ফোলেট, যা রক্তচাপ ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।

মস্তিষ্ক সতেজ রাখে : পালং শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কের সতেজতা ধরে রাখে। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে : কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত পালং শাক খেতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন। যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী।

বাত ব্যথা নিরাময় : বাত ব্যথা ও অস্টিওপোরোসিসের ব্যথা নিরাময়ে পালং শাক খুবই কার্যকরী। এতে রয়েছে প্রদাহবিনাসী উপাদান।

মাইগ্রেন ও মাথা ব্যথা নিরাময় : মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা নিরাময়ে পালং শাকের জুড়ি মেলা ভার।

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় : যারা দীর্ঘদিন হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, তারা নিয়মিত পালং শাক খেতে পারেন। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে : পালং শাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি, যা রক্ত স্বল্পতা দূর করে। কারণ আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে : এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধী নানা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ফলে পালং শাক খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

হজমশক্তি বাড়ে : পালং শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যামাইনো অ্যাসিড। আর এই উপাদানটি মেটাবলিজম ক্ষমতা উন্নত করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : নিয়তি পালং শাক খান, পেটের সমস্যা দূর হবে। এতে রয়েছে আঁশ, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে।

কিডনি সুরক্ষিত রাখে : চিকিৎসা গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত পরিমাণ মতো পালং শাক খেলে কিডনীতে জমে থাকা পাথর গুঁড়ো হয়ে মলমূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : কোলন ক্যান্সার ছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে পালং শাকে। যা চিকিৎসা গবেষণা প্রমাণিত।

হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে : দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। যা পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।

চোখের সুরক্ষায় : পালং শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। এই দুটি উপাদান চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

চর্মরোগ নিরাময় : এতে রয়েছে নিয়োক্সেথিন এবং ভায়োল্যাক্সানথিন নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এই উপাদানগুলো চর্মরোগ নিরাময় ও ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে : পালং শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা তারুণ ধরে রাখতে সহায়তা করে। ফলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়।

পরার্মশ

যারা ইউরিক অ্যাসিড বা গেটে বাতের সমস্যায় ভুগছেন, তারা পালং শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তারাও পালং শাক খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র: এই সময় (কলকাতা), উইকিপিডিয়া, আনন্দবাজার ও হেলথবিডি

 

এবি/এসএন

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:০৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।