• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সচল রাখতে অঙ্গ, খেতে পারেন লবঙ্গ’

‘সচল রাখতে অঙ্গ, খেতে পারেন লবঙ্গ’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

মসলা হিসেবে লবঙ্গ অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি শুধু মসলাই নয়, যেন প্রাকৃতিক এক মহৌষধ। এতে রয়েছে ভেষজ গুণাগুণ। বাঙালির রান্নায় স্বাদ আনতে লবঙ্গের জুড়ি মেলা ভার। বিশ্বের সব অঞ্চলেই লবঙ্গ খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। রান্না ছাড়াও এটি চিবিয়ে খাওয়াও উপকারী।

প্রিয় পাঠক চলুন দেখে নিই লবঙ্গের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-

পরিচয়

লবঙ্গ এর বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium aromaticum। এর অন্য নাম Eugenia aromaticum বা Eugenia caryophyllata। এটি এক ধরণের মসলা। লবঙ্গ গাছের ফুলের কুঁড়ি শুকিয়ে লবঙ্গ মসলা তৈরি করা হয়। এটির আদি নিবাস ইন্দোনেশিয়া। তবে বর্তমানে এটি পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়। জাঞ্জিবার, ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কারে লবঙ্গ চাষ বেশি হয়। এছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাতেও লবঙ্গের চাষ হচ্ছে।

রাসায়নিক উপাদান

লবঙ্গের মূল কারণ "ইউজেনল" (ঊঁমবহড়ষ) নামের যৌগ। এটি লবঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তেলের মূল উপাদান। এই তেলের প্রায় ৭২-৯০% অংশ জুড়ে ইউজেনল বিদ্যমান। এই যৌগটিতে জীবাণুনাশক এবং বেদনানাশক গুণ রয়েছে।

উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, লবঙ্গের তেলে রয়েছে অ্যাসিটাইল ইউজেনল, বেটা-ক্যারোফাইলিন, ভ্যানিলিন, ক্র্যাটেগলিক অ্যাসিড, ট্যানিন, গ্যালোট্যানিক অ্যাসিড, মিথাইল স্যালিসাইলেট, ফ্ল্যাভানয়েড, ইউজেনিন, র‌্যাম্নেটিন, ইউজেনটিন, ট্রি-টেরপেনয়েড, ক্লিনোলিক অ্যাসিড, স্টিগ্মাস্টেরল, সেস্কুইটার্পিন।

অন্যান্য উপাদান

নিউইয়র্কের জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনের তথ্য বলছে, প্রতি ১ চামচ গুঁড়া লবঙ্গে রয়েছে

ক্যালরি ৬ কিলোক্যালরি
শর্করা ১ গ্রাম
আঁশ ১ গ্রাম
ভিটামিন সি ৩ শতাংশ
ভিটামিন কে ২ শতাংশ এবং
ম্যাঙ্গানিজ- ৫৫ শতাংশ। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন ই।

উপকারিতা

ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজারে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে-

হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় করে : হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা নিরাময়ে লবঙ্গ বেশ কার্যকরী। লবঙ্গ চা হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

গ্যাস্ট্রিক ও পেটের ব্যথা দূর করে : পুরনো গ্যাস্ট্রিক ও পেটের ব্যথা দূর করতে লবঙ্গ খুবই কার্যকরী। রাতে শোবার আগে দুটি লবঙ্গ মুখে চিবিয়ে খেয়ে নিন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে : রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে লবঙ্গ। নিয়মিত কয়েক টুকরা লবঙ্গ পানিতে মিশিয়ে সেই পানি ফুটিয়ে চায়ের মতো পান করুন। এতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : যারা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জন্য লবঙ্গ যেন মহৌষধ। প্রতিদিন সকালে ও রাতে লবঙ্গ দিয়ে চা তৈরি করুন। এতে দেহের শর্করার মাত্রা কমে আসবে। নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবেটিস।

খাদ্যে বিষক্রিয়া সারাতে : অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অনেকেই মাঝেমধ্যে বিষক্রিয়ার সম্মুখীন হন। এ সময় লবঙ্গ খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। কারণ এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ‘ইউজেনল’।

আলসার নিরাময় করে : ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, স্ট্রেস বা জিনগত কারণে পেপটিক আলসার বা পাকস্থলীর আলসার হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি লবঙ্গ খান, তাহলে এই আলসার আপনার ধারে কাছেও আসতে পারবে না।

ইনফেকশন দূর করে : ছত্রাকজনিত ইনফেকশন দূর করতে সহায়তা করে লবঙ্গ। নিয়মিত লবঙ্গ চা পান করুন। এটি সব ধরণের ছত্রাকজনিত ইনফেকশন দূর করবে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : যারা হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তারা এখন থেকেই লবঙ্গ চা পান করার অভ্যাস করুন। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ব্যাপক কার্যকরী।

গলাব্যথা ও কাশি নিরাময় : ঠান্ডাজনিত গলাব্যথা বা খুশখুশে কাশি উপশমে লবঙ্গ খুবই কার্যকরী। গরম পানিতে লবঙ্গ ও মধু মিশিয়ে দিনে কয়েকবার পান করুন। গলাব্যথা ও কাশি দূর হবে।

সতর্কতা

ভারতের জনপ্রিয় ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরীর দেয়া তথ্যসূত্রে আনন্দবাজার বলছে, অনেকে অকারণেই মুখে লবঙ্গ রাখতে পছন্দ করেন। এটি ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস। অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে বিষক্রিয়ার ভয় থাকে।

অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে। রক্ত চলাচলেও এটি কখনো কখনো বাঁধা প্রদান করে। এছাড়া যাদের অ্যালার্জি আছে, লবঙ্গ তাদের জন্য ঝুঁঁকির কারণ হতে পারে। লবঙ্গ নিয়ে গবেষকরা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, কাজেই ওষুধ হিসেবে লবঙ্গ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

তথ্যসূত্র : হেলথলাইন, হেলথ নিউজ টুডে, আনন্দবাজার ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:৫২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।