• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু আগাছা নয়, ক্যান্সার ছড়ায় অতিপরিচিত যে ঘাস

শুধু আগাছা নয়, ক্যান্সার ছড়ায় অতিপরিচিত যে ঘাস

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

বিষাক্ত এক আগাছা ‘পার্থেনিয়াম’। খেয়াল করে দেখবেন আপনার ঘরে পাশেই কিংবা রাস্তার ধারে এই আগাছার বাস। দেশের প্রায় সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর এই আগাছা। ক্যান্সার, চর্মরোগ ও অন্যান্য জটিল রোগের বাহক পার্থেনিয়াম এখন এক আতঙ্কের নাম। ইংরেজিতে একে বলা Parthenium। এটি মূলত সূর্যমুখীর একটি উপজাত। উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো পার্থেনিয়ামের আদি নিবাস। বাংলায় একে বলা হয় ‘কুমারী’। ভারতে এই উদ্ভিদকে বলা হয় ‘কংগ্রেস ঘাস’।

তবে বাংলাদেশ ও ভারতে এটি বহুল পরিচিত গাজর ঘাস হিসেবে। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ১৬টি প্রজাতির মধ্যে পার্থেনিয়ামের সব থেকে বিষাক্ত প্রজাতি বাংলাদেশে দেখা যায়।

পার্থেনিয়াম চিনবেন যেভাবে

এই গাচের পাতা খাঁজযুক্ত, দেখতে অনেকটা চন্দ্রমল্লিকা গাছের পাতার মতো। এর ফুল আকারে ছোট ও সাদা। পার্থেনিয়ামের জীবনচক্র চার মাসের। গবেষকরা বলছেন, একটি গাছ থেকে ৪/৫ হাজার নতুন গাছ জন্মাতে পারে। আর এ কারণেই পার্থেনিয়ামের বংশবৃদ্ধি রোধ করা কঠিন।

পার্থেনিয়াম যেভাবে এলো ভারতবর্ষে

ইতিহাস বলছে, উত্তর-পূর্ব মেক্সিকোতে পার্থেনিয়ামে জন্ম। এটি ১৯৪৫ সালে আমদানি করা গমের চালানের সঙ্গে আমেরিকা থেকে ভারতবর্ষে আসে। সেই গমের বীজ তৎকালীন কংগ্রেস সারা ভারতে বণ্টন করে। আর ওই গমের আবাদের পরই ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন আগাছা হিসেবে পার্থেনিয়ামের প্রকাশ ঘটে। যে কারণে ভারতে এখনো পার্থেনিয়ামকে ‘কংগ্রেস ঘাস’ বলা হয়।

যদিও আনন্দবাজারে প্রকাশিত নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, ১৮৮৮ সালে ভারতের দেরাদুনের বন গবেষণার অধ্যক্ষ ডি. ব্রান্ডিসের তৈরি হার্বেরিয়ামে পার্থেনিয়াম আগাছার সন্ধান মেলে। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই আগাছা প্রথম দেখা যায় ১৯৭৫ সালে। ডানকুনি রেলইয়ার্ডে।

পার্থেনিয়ামে ভয়ঙ্কর যেসব ক্ষতি

→ গবেষকরা বলছেন, পার্থেনিয়াম গাছের আগাগোড়া সবটুকুই ক্ষতিকর। এটি ‘সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন’ জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ ‘পার্থেনিন’।

→ এতে রয়েছে ক্যাফেইক অ্যাসিড, পি-অ্যানিসিক অ্যাসিডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান। এসব উপাদান ক্ষতস্থানে রক্তের সঙ্গে মিশে চর্মরোগ সৃষ্টি করে।

→ পার্থেনিয়াম ফুলের রেনু বা বীজ নাকে প্রবেশ করিলে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, জ্বরের সংক্রমণ দেখা দেয়।

→ পার্থেনিয়াম আগাছা যদি গরু-ছাগল খায়, তাহলে গবাদিপশুর অন্ত্রে ঘা দেখা দিতে পারে। এই আগাছা গবাদিপশুর দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়।

→ পার্থেনিয়াম খাওয়ার ফলে গবাদিপশুর মুখে ও পৌষ্টিকতন্ত্রে ঘা, যকৃতে পচন প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি হয়।

→ সবচেয়ে আতঙ্কের খবর, অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের চামড়ায় পার্থেনিয়ামের রেনু বা রস লাগলে ঘা হতে পারে। এমনকি এটি ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করে।

দমন পদ্ধতি

গবেষকরা বলছেন, হেক্টর প্রতি ১-১.৫ কেজি হারে আগাছা নাশক মেট্রিবুজিন প্রয়োগ করলে পার্থেনিয়াম আগাছা সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়। এছাড়া প্রতি ৪/৫ লিটার পানিতে এক কেজি লবণ মিশিয়ে সেই পানি স্প্রে করলে পার্থেনিয়াম গাছ মারা যায়। মারা যাওয়া গাছ আগুনে পুড়িয়ে ফেললে আর বংস বিস্তার হয় না।

সতর্কতা

পার্থেনিয়াম আগাছা দমন করার সময় ফুল হাতা শার্ট অথবা পলিস্টার গেঞ্জি পরুন। মুখে মাস্ক ও হাতে প্লাস্টিকের গ্লাভস ব্যবহার করুন। আগাছানাশক অথবা লবণপানি স্প্রে করার পর এবং আগাছা পুড়িয়ে ফেলার পর সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করে নিন।

 

তথ্যসূত্র: রিসার্চ গেইট, আনন্দবাজার ও উইকিপিডিয়া।

২১ মে ২০২৩, ০৫:৪০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।