বেদানা ডালিম আনার, একই ফলে পুষ্টি হাজার
প্রতিকী ছবি
ডালিম, আনার বা বেদানা একই জাতীয় ফল। ফলটি জাত, পুষ্টিগুণ ও স্বাদে অভিন্ন। এখন বেদানা বা আনারের ভরা মৌসুম। অন্য সময়ের চেয়ে সস্তায় এখন বেদানা, ডালিম বা আনার পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণ ও ভেষজ উপাদানে ভরপুর ফলটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য আমাদের এই পর্ব সাজানো হয়েছে বেদানা, আনার বা ডালিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে। চলুন এক নজরে দেখে নিই কি আছে বেদানায়-
পরিচয়
বেদানা, আনার বা ডালিমের বৈজ্ঞানিক নাম Punica granatum। ইংরেজিতে ফলটিকে বলা হয় Pomegranate। হিন্দী, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে আনার বলা হয়। সংস্কৃত ও নেপালি ভাষায় ফলটির নাম দারিম। বেদানা গাছ গুল্ম জাতীয়। এর আদি নিবাস ইরান ও ইরাকে।
এটি তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন, বার্মা, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইনসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চাষ হয়।
পুষ্টিগুণ
বেদানা অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি।
প্রতি ১০০ গ্রাম বেদানায় রয়েছে
ক্যালরি ৩৪৬ কিলোক্যালরি
শর্করা ১৮.৭ গ্রাম
গ্লুকোজ ১৩.৭ গ্রাম
আমিষ ১.৭ গ্রাম
চর্বি ১.২ গ্রাম
কোলেস্টেরল নেই
আঁশ ৪ গ্রাম
ভিটামিন বি৯ ৩৮ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন বি৩ ০.২৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১ ০.০৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬ ০.০৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৫ ০.৩৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ১০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ২৩৬ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ১২ মিলিগ্রাম এবং
জিঙ্ক ০.৩৫ মিলিগ্রাম।
উপকারিতা
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : বেদানা বা ডালিম রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত বেদানা বা ডালিম অথবা আনার খান। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে।
আর্থ্রাইটিস দূর করে : যারা হাড় ও হাড়ের জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন, তাদের জন্য বেদানা হতে পারে অত্যন্ত কার্যকরী একটি নিরাময়যোগ্য উপাদান। এটি ব্যথা উপশমে খুবই কার্যকরী।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : বেদানা, আনার বা ডালিম দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রায় কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে : অ্যালঝেইমার্সে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেদানা, ডালিম বা আনার হতে পারে দারুণ এক প্রাকৃতিক ওষুধ। এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করে।
রক্তশূন্যতা দূর করে : হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে ডালিম সহায়তা করে। আর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : যারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা নিয়মিত ডালিম, আনার অথবা বেদানা খাওয়ার মাধ্যমে সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। কারণ এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ইনসুলিন।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : ডালিম, বেদানা বা আনারে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী বেশ কিছু খনিজ উপাদান। যা স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করে : দ্রুত দৈহিক শক্তি বৃদ্ধিতে আনার, বেদানা বা ডালিমের জুড়ি মেলা ভার। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর খাদ্যশক্তি।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে : ডালিম, বেদানা বা আনারে রয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
হাড় ও মাড়ির সুরক্ষা : আনার, ডালিম বা বেদানায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি, যা হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।
সতর্কতা
ডালিম, আনার বা বেদানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল হলেও এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। বিশেষ করে কিডনী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও গর্ভবতীদের জন্য ডালিম, আনার বা বেদানা হতে পারে ক্ষতির কারণ। তাই কিডনী রোগ ও গর্ভকালীন আনার, বেদানা বা ডালিম এড়িয়ে চলাই ভালো।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, সরকারি কৃষি তথ্য সার্ভিস (বিডি) ও হেলথলাইন ডট কম।
এবি/এসএন