• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘তিক্ত চিরতায় মধুর উপশম’

‘তিক্ত চিরতায় মধুর উপশম’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ভারতবর্ষে সুপ্রাচীনকাল থেকে ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত উপাদানগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে আছে ‘চিরতা’। ভারতীয় উপমহাদেশই চিরতার জন্মভূমি। হিমালয়ের পাদভূমিতে চিরতার উৎপত্তি।

চিরতা নিয়ে এই পর্বে নানা ধরণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। চলুন এক নজরে দেখে নিই-

পরিচয়

ভারতবর্ষ থেকে ১৮৩৯ সালে চিরতা ইউরোপে প্রবেশ করে। প্রাচীন আয়ুর্বেদ ও চরক সংহিতায় চিরতার নাম উল্লেখ রয়েছে। চিরতার আয়ুর্বেদীয় নাম কিরাততিক্তা। এর বাংলা নাম চিরতা। চিরতা ও সবুজ চিরতা নামে দুটি ভিন্ন জাত রয়েছে। তবে গুণাগুণ একই।

এটি জেসিএনেসি বর্গের অন্তর্গত একটি গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Swertia chirayita। হিন্দীতে এর নাম ‘চিরায়াতা’।

পুষ্টিগুণ

এটি রোগ নিরমায়ে অত্যন্ত কার্যকরি একটি ভেষজ উপাদান। এই গাছের শিকড় থেকে ফুল পর্যন্ত ওষুধিগুণে ভরপুর। হেপাটাইটিস, ডায়াবেটিস, ম্যালেরিয়া জ্বর ও অ্যাজমা সারাতে চিরতা খুব দ্রুত কাজ করে।

উপকারিতা

সাধারণ সংক্রমণ নিরাময় : জ্বর, কাশি ও সর্দির মতো সাধারণ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে চিরতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি জ্বর ও কাশি নিরাময়ে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

প্রতিদিন ৫-১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সেদ্ধ করুন। পানি ২ কাপে নেমে এলে তা ঠাণ্ডা করে সকাল ও রাতে দুই ভাগে পান করুন। জ্বর ও কাশি চলে যাবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : যাদের ডায়াবেটিস কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না, তারা নিয়মিত চিরতার রস অথবা গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে খেলে এটি বেশি কার্যকরি।

রক্তশূণ্যতা কমায় : এটি দেহে রক্তকোষ গঠন করে। কাজেই নিয়মিত চিরতা খেলে রক্তশূন্যতা কমে যায়। এটি দেহের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, নাক দিয়ে রক্তপড়াও বন্ধ করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: চিরতায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা বার্ধক্যকে বিলম্বিত করে। এমনকি নিয়মিত চিরতা খেলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।

অ্যালার্জি দূর করে : যারা চুলকানি ও অ্যালার্জি সমস্যায় ভুগছেন, তারা চিরতা খেতে পারেন। চিরতার রস তিতা হওয়ায় এটি চুলকানি ও অ্যালার্জি সারাতে খুবই কার্যকরি। রাতে ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ শুকনো চিরতা ২৫০ মিলি. গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ওই পানি ঠাণ্ডা করে পান করুন, অ্যালার্জি ও চুলকানি দূর হবে।

বমি থেকে মুক্তি : যারা পিত্তজ্বর বা বমি হওয়ার জটিলতায় ভুগছেন, তারা সবুজ চিরতা খেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ২ কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা থেঁতো করে ভিজিয়ে রাখুন। ভেজানোর ২/৩ ঘণ্টা পর পানিটা ছেঁকে নিয়ে অল্প অল্প পরিমাণে পান করুন। বমি দূর হবে।

হাঁপানি নিরাময় : যারা অ্যাজমা ও হাঁপানিতে ভুগছেন, তাদের জন্য চিরতা হতে পারে দারুণ এক ওষুধ। আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে তিন ঘণ্টা পরপর খান, উপকার পাবেন।

কৃমি দূর করে : পেটে কৃমি বেড়ে গেলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য মধুর সঙ্গে একটু চিরতার গুঁড়ো মিশিয়ে চেটে চেটে খান। কৃমির উপদ্রব দূর হবে।

প্রদাহ সারিয়ে তোলে : অনেকেই দীর্ঘদিনের ঘাঁ নিয়ে বিপাকে পড়েন। কোরনাভাবেই ঘাঁ শুকাতে চায় না। তারা রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে ওই পানি পান করুন, ঘাঁ সেরে যাবে।

চুল পড়া বন্ধ করে : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের মাথার চুল পড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য কত রকম চেষ্টাই না আমরা করে চলেছি। কিন্তু আপনি কি জানেন, রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে সেই পানি ছেঁকে নিয়ে তা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুল পড়া কমে যাবে। এটি কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

পরামর্শ

চিরতা খুবই উপকারি একটি ভেষজ উপাদান। তবে যারা নিম্ন রক্তচাপ ও কিডনী জটিলতায় ভুগছেন, তারা চিরতা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস, তথ্য বাতায়ন ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২৩ আগস্ট ২০২১, ০৫:০৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।