• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের সবজির যত পুষ্টিগুণ

শীতের সবজির যত পুষ্টিগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

অগ্রহায়ণের আগমনে দেশের গ্রামে গ্রামে এখন নতুন ফসল তোলার ধুম। নতুন ধানের পিঠাপুলির আহ্বান আমাদের হৃদয়ে দোলা দেয়। হেমন্ত যেমন গায়ে যেমন দেশে এসেছে শীত, তেমনি শীতের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে আসতে শুরু করেছে সতেজ শাক-সবজি। শীত মানেই যেন বাহারি সবজির বিরাট উৎপাদন। বছরের এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি সবজি পাওয়া যায়।

শীতকালে সবজির স্বাদও যেন বেড়ে যায় বহুগুণে। আমাদের দেশে শীতের সময় বাজারে বেশি দেখা যায়- ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, লাউ, মটরশুঁটি, গাজর, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টেমেটো ও পেঁয়াজ কলি ইত্যাদি।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, শীতকালীন সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ভিটামিন-‘সি’, ভিটামিন-‘এ’ এবং ভিটামিন-‘ই’-এর ঘাটতি পূরণেও শীতকালীন সবজির জুড়ি মেলা ভার।

কেন খাবেন শীতের সবজি

জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইন ও হেলথ বেনেফিট টাইমসে এ সংক্রান্ত অসংখ্য নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক জার্নালগুলোতে শীতকালীন সবজির নানা উপকারি দিক তুলে ধরা হয়েছে। শীতকালীন উপকারি সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

লাউ: লাউ মূলত ঠাণ্ডাজাতীয় একটি সবজি। এর ৭০ শতাংশই জলীয় অংশ। লাউয়ে থাকা জলীয় অংশ আমাদের দেহকে সহজেই পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়াও লাউয়ে থাকা ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘কে’, ভিটামিন ‘ই’, ফাইবার, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক মানবদেহকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও লাউ অত্যন্ত কার্যকরী।

গাজর: গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও খাদ্যআঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি। এই সবজি এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি কিংবা সালাদ হিসেবেও গাজর খাওয়া যায়। গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়া গাজরে থাকা অন্যান্য উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও গাজরের জুড়ি মেলা ভার।

টমেটো: টমেটো আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় একটি সবজি। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালোরি। টমেটো ভিটামিন-সি তে ভরপুর। এই ভিটামিন-সি ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কার্যকরী। এ ছাড়া ঠান্ডাজনিত রোগ সারাতেও টমেটো ভালো ফল দেয়। টমেটোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রতিক্রিয়া ধ্বংস করে।

পালংশাক: পালংশাক উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এ ছাড়া পালংশাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন। এসব উপাদান আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে। পালংশাক হৃদরোগ এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধেও অত্যন্ত কার্যকরী। এই শাকের ক্যারোটিনয়েডস ও শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রস্টেট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ।

ব্রোকলি: শীতকালীন সবজি হিসেবে ব্রোকলির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন এই সবজি চাষ হচ্ছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, ব্রোকলিতে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও ক্যালসিয়াম। এটি চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতির উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ফুলকপি: ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও সি। এতে আরও রয়েছে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফারের মতো খনিজ উপাদান। এই সবজিতে আয়রন রয়েছে সবচেয়ে বেশি। রক্ত তৈরিতে আয়রনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা মানুষের জন্য ফুলকপি হতে পাওয়ার বুস্টার উপাদান। এ ছাড়া পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধেও ফুলকপি কার্যকরী।

মূলা: শীতের আরেকটি অতি পরিচিত সবজির নাম ‘মূলা’। এই সবজিটি কাঁচা এবং রান্না উভয় ভাবেই খাওয়া যায়। মূলার পাতায় ভিটামিন ‘এ’ থাকে প্রচুর পরিমাণে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এই সবজি দারুণ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কিডনি ও পিত্তথলির পাথর হওয়া রোধ করে মুলা।

বাঁধাকপি: বাঁধাকপি বেশ উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন এবং সুস্বাদু একটি সবজি। এটি খুব সহজেই রান্না করা যায়। এতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ ও ভিটামিন ‘ই’ এবং সালফার পাকস্থলীর বর্জ্য পরিষ্কার করে। এছাড়া রান্না করা বাঁধাকপি খাবার হজমে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও এই সবজি দারুণ কার্যকরী।

ধনেপাতা: ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’ ও ফলিক এসিড। এই উপাদানগুলো ত্বকের জন্য যথেষ্ট। ধনেপাতায় থাকা উপাদানগুলো ত্বকে পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে এবং মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে সুরক্ষা দেয়। মুখের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ধনেপাতা দারুণ ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শীতকালীন ঠোঁট ফাঁটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতেও এই পাতার জুড়ি নেই।

শিম: শিম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এটি উদ্ভিজ আমিষের উত্তম একটি উৎস। শীম সবজি হিসেবে ও শিমের বিচি ডাল হিসেবে খাওয়া যায়। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ থাকে। শিম ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বৃদ্ধি করে।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও কৃষি গবেষণা সংস্থা (বাংলাদেশ)

১৭ নভেম্বর ২০২২, ০৭:০১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।