• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘গুণে ভরা লাউ, যত পারো খাও’

‘গুণে ভরা লাউ, যত পারো খাও’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

অক্টোবরের শেষ নাগাদ দেশে উত্তরের মৃদু বাতাস বইতে শুরু করে। বাংলা ঋতুচক্রে শীত জানান দেয় তার আগমনী বার্তা। শীতের শুরু থেকেই দেশে প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। ওই সময়েই দেশে সবজি পাওয়া যায় বেশি, দামও থাকে হাতের নাগালে। তবে শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে বেশি পাওয়া যায় ‘লাউ’ বা কদু।

এটি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের পছন্দের একটি সবজি। লাউয়ের কচি ডগাও খুব জনপ্রিয়। লাউ দিয়ে বড়া, পিঠা ও দুধ লাউ পায়েসসহ নানা পদের খাবার তৈরি করা হয়। পুষ্টিগুণে লাউ অত্যন্ত শক্তিশালী একটি খাবার। এমনকি হযরত মুহাম্মদ (স.) লাউ বা কদু খাবার হিসেবে খুব পছন্দ করতেন বলে হাদিস শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে।

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে নিয়েছেন, আমাদের এবারের পর্বে তুলে ধরা হয়েছে লাউ ও এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

পরিচয়

লাউ বা কদুর বৈজ্ঞানিক নাম Lagenaria siceraria। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। লাউ এক প্রকার লতানো উদ্ভিদ, যা এর ফলের জন্যে চাষ করা হয়। পরিপক্ব লাউ না খেয়ে তা সংরক্ষণ করলে লাউয়ের শক্ত খোল পাত্র ও বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লাউয়ের ইংরেজি নাম Bottle gourd।

লাউ এর পুষ্টিগুণ

গবেষকরা বলছেন, লাউ-এ রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ। এছাড়া খনিজ উপাদানের মধ্যে লাউয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফোলেট, আয়রন ও পটাশিয়াম।

প্রতি ১০০ গ্রাম লাউ-এ রয়েছে

কার্বোহাইড্রেট ২.৫ গ্রাম
প্রোটিন ০.২ গ্রাম
চর্বি ০.৬ গ্রাম
ভিটামিন সি ৬ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৬১০ মিলিগ্রাম এবং
পটাশিয়াম- ৮৭ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা

ওজন কমায় : এতে রয়েছে প্রচুর জলীয় অংশ। এছাড়া লাউয়ে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ। ফলে নিয়মিত লাউ খেলে ওজন কমে। কারণ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার হজমশক্তি বাড়ায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

অবসাদ দূর হয় : লাউয়ে রয়েছে কোলন নামক নিউরো ট্রান্সমিটার। এই উপাদানটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে মানসিক অবসাদ দূর হয়। যারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, তারা নিয়মিত লাউ খেলে উপকার পাবেন।

পেটের রোগ নিরাময় : অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে বদহজম ও অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি হয়। যা ধীরে ধীরে পেটে নানা ধরণের রোগের সৃষ্টি করে। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত লাউ খান, তাহলে আপনার পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে। লাউয়ে থাকা পানি ও আঁশ অ্যাসিডিটি নিরাময়ে খুবই কার্যকরি।

পানিশূন্যতা দূর করে : যারা পানিশূন্যতায় ভুগছেন, তাদের জন্য লাউ হতে আদর্শ একটি খাবার। শরীরে পানির ঘাটতি পুরণ ও শরীর চাঙ্গা রাখতে লাউ খুবই কার্যকরি। নিয়মিত লাউ খেলে ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা কমে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে : যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তারা নিয়মিত লাউ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। লাউয়ে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় লাউ।

ঘুমহীনতা দূর করে : আপনি কি অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ায় ভুগছেন, তাহলে লাউ হতে পারে আপনার জন্য কার্যকর একটি ঘুমের ওষুধ। গবেষকরা বলছেন, লাউয়ের রস অনিদ্রা দূর করে। তাই অনিদ্রা থেকে মুক্তি পেতে লাউ খাওয়ার অভ্যাস করুন।

ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা : লাউ নিয়মিত খেলে আপনি নিজেই নিজের চেহারার উন্নতি বুঝতে পারবেন। এছাড়া গবেষণায়ও এটা প্রমাণিত। লাউ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এটি মুখমণ্ডলের ত্বকের কালোদাগ ও বলিরেখা দূর করে।

শরীর ঠাণ্ডা রাখে : শরীর শান্ত ও ঠাণ্ডা রাখতে লাউয়ের জুড়ি মেলা ভার। সপ্তাহে ২-৩ দিন নিয়মিত লাউয়ের রস খাওয়ার অভ্যাস আপনার শরীরকে নানা রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : লাউয়ে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরি। লাউয়ের রসের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র : হেলথবেনিফিট টাইমস ডট কম, নিউট্রিশন আইএক্স ডট কম ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২২ আগস্ট ২০২১, ০৫:১২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।