• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডেঙ্গু: আতঙ্ক নয়, ঘরোয়া সেবায় সুস্থতার উপায়

ডেঙ্গু: আতঙ্ক নয়, ঘরোয়া সেবায় সুস্থতার উপায়

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সারা দেশেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশে সাধারণত জুন-জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। বর্ষাকালে জ্বর হলেই আমাদের দেশে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত এই জ্বর হয়ে থাকে অতিরিক্ত মাত্রার, ১০২ থেকে ১০৫ ফারেনহাইট। জ্বরের সঙ্গে আরও যেসব উপসর্গ থাকে, তা হলো তীব্র শরীর ব্যথা, পিঠে ও মাংসে ব্যথা, চোখের চারপাশ ও পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব অথবা বমি, পেটে ব্যথা, ক্ষুধামন্দ্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্বাদের পরিবর্তন এবং গায়ে লালচে ভাব।

এ সময় জ্বরে আক্রান্ত হলে কালক্ষেপণ না করে শুরুতেই প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট করে নেয়া প্রয়োজন। এর সঙ্গে প্রয়োজন সিবিসি, এসজিপিটি ও এসজিওটি টেস্ট করা। কারণ, এবার একটু দ্রুতই কিছু বুঝে ওঠার আগেই জটিলতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি জাপানি গবেষকদের প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক দশকে নানা কারণে বিশ্বজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ মিলিয়নের কাছাকাছি। বিশ শতকের পর থেকে প্রায় ১০০টা দেশে এই ভাইরাল ইনফেকশন প্রায় মহামারির আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে ঘরে বসেই ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা করা যেতে পারে।

ডেঙ্গুর ঘরোয়া চিকিৎসা

জাপানি গবেষকরা বলছেন, ঘরেই ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা চলতে পারে। ঘরের সেবা ডেঙ্গু রোগীর জন্য সবচেয়ে উত্তম সেবা। ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-

পানি পান করা : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে পানির মাত্রা কমতে শুরু করে। তাই এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা একান্ত প্রয়োজন। এমনটা করলে ডেঙ্গুর বেশ কিছু লক্ষণ নিমেষে কমে যায়, যেমন : মাথা যন্ত্রণা, পেশির ব্যথা, ডিহাইড্রেশন প্রভৃতি।

নিম পাতার রস : ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে নিম পাতার বিকল্প আজও পাওয়া যায়নি। প্রকৃতিক এই অনন্য উপাদানটিতে থাকা বেশ কিছু কার্যকরি উপাদান শরীরে প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়ানোর পাশাপাশি শ্বেত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

পেঁপে পাতা : প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বৃদ্ধিতে পেঁপে পাতা দারুণভাবে কাজ করে। সেই সঙ্গে এটি দেহে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডেঙ্গুর নানাবিধ লক্ষণ কমতে শুরু করে।

কমলার রস : কমলায় রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। এই উপাদানগুলো ডেঙ্গুর লক্ষণ কমানোর পাশাপাশি ভাইরাসের প্রকোপ কমাতেও সহায়তা করে। এছাড়া কমলার রস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। দেহের ক্ষতিকর টক্সিনকেও বের করে দেয় কমলার রস।

তুলসী পাতা : রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমাতে তুলসী পাতা তুলনাহীন। বিশেষজ্ঞরা এমন রোগীদের নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

মেথি : মেথি শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা কমাতে সাহায্যে করে এবং শরীরের ব্যথা নিরাময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। ফলে নিশ্চিন্ত ঘুম হয়, যা শরীরকে দ্রুত সুস্থ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী।

পুদিনা পাতা : পুদিনা পাতা চিবিয়ে খাওয়া গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি পুদিনার তেল ব্যবহার করলে মশা আশপাশে ঘেঁষবে না।

বার্লি পাতা : বার্লি পাতা চিবিয়ে খেলে তা শরীরের রক্ত উৎপাদনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে প্লাটিলেটের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

শাকসবজি : অলিভ, সয়াবিন, ব্রকোলি, ফুলকপি, টমেটো প্রভৃতি সবজি শরীরের রক্তের প্রবাহকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে রক্ত জমাট বাধতে পারে না। এতে প্লাটিলেটের মাত্রাও সঠিক থাকে।

জ্বর কমানোর আরও কিছু উপায়

ডেঙ্গুর উচ্চমাত্রার জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করুন। প্যারাসিটামল ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর জ্বরের মাত্রা বুঝে ব্যবহার করা যাবে। দিনে ৮ থেকে ১০টি ট্যাবলেটের (সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম) বেশি ব্যবহৃত হলে লিভারের ক্ষতিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। জ্বর কমাতে কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন অথবা ব্যথানাশক এনএসএইড গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।

বিশ্রাম : ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগীদের শারীরিক দুর্বলতাটাও থাকে অত্যধিক। উপসর্গের ৭ থেকে ১০ দিন ভারী কাজ ও মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন।

অন্যান্য ওষুধ : জ্বরের পাশাপাশি অনেকের বমি ভাব, ডায়রিয়া থেকে থাকে। এসব উপসর্গ নিরাময়ে আরও কিছু ওষুধ চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন। তবে ডেঙ্গু রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের কোনো প্রয়োজন নেই।

সতর্কতা

রোগীর কিছু সতর্কসংকেত জেনে রাখতে হবে। যেসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে অথবা হাসপাতালে চলে যেতে হবে। সেগুলো হলো অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথা বলা, অনবরত বমি, তীব্র পেটে ব্যথা, গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ, শ্বাসকষ্ট, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত মাসিকের রক্তক্ষরণ, রক্তবমি।

 

তথ্যসূত্র- ওয়েব এমডি, মেডিকেল নিউজ টুডে ও কিডজ হেলথ।

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:০৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।