• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানসিক স্বাস্থ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, কিভাবে হবে অর্জন

মানসিক স্বাস্থ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, কিভাবে হবে অর্জন

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

মন ভালো তো সব ভালো। মানসিক বিপর্যয় আমাদের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। সুস্থ সুন্দর জীবনের জন্য মনের প্রশান্তি খুবই প্রয়োজন। মানসিক সুস্থতা বা মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। তবে আমাদের অনেকেই হয়তো, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ততটা জ্ঞাত নন। যে কারণে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্বই দিই না।

সাধারণত আমরা শরীরের অসুখ টের পেলেও নিজের কিংবা অন্যের মনের অসুখ টের পাই না। এ কারণে অনেকেই মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত, নেশাগ্রস্ত কিংবা আত্মহননকারী হয়ে ওঠেন। যা কারও কাম্য নয়।

এজন্য ফিট ও সুস্থ থাকতে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া জরুরি। তবে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেরই দু’দণ্ড বসে কাটানোর ফুরসত নেই। এ কারণেই মানুষের মধ্যে চাপ ও উদ্বেগ বাড়ছে। দীর্ঘদিন এভাবে থাকতে থাকতে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।

ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকেয়েট্রিতে প্রকাশিত ‘কান্ট্রি পেপার অন মেন্টাল হেলথ-বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮.৭ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত।

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করবেন যে ভাবে

পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে: ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই রাসায়নিকগুলো আমাদের মেজাজ ও আবেগ পরিচালনা করে। যদি আমরা পর্যাপ্ত না ঘুমায়, তাহলে মস্তিষ্কে বিভিন্ন অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া স্বাভাবিক। তাই পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই।

পুষ্টিকর খাবার: পুষ্টিকর খাবার শুধু শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং মনের জন্যও উপকারী। কিছু খনিজ যেমন- আয়রন ও ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি মেজাজ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তাই সুষম খাবার খাওয়া জরুরি।

অ্যালকোহল, ধূমপান ও মাদক পরিহার: অনেকেই হতাশ হয়ে ধূমপান ও মাদকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তবে জানেন কি, এগুলো হতাশা কাটায় না বরং শরীর ও মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত মদ্যপানে শরীরে থায়ামিনের ঘাটতি হতে পারে। থায়ামিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সূর্যের আলো গায়ে মাখুন: সূর্যালোক ভিটামিন ডি এর একটি বড় উৎস। ভিটামিন ডি শরীর ও মস্তিষ্কের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মস্তিষ্কের ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে। ফলে মেজাজ আরও উন্নত হয়। কারণ অ্যান্ডোরফিন ও সেরোটোনিন এর উৎপাদন বেড়ে যায়। তবে রোদে গেলে ত্বক ও চোখকে নিরাপদ রাখুন। প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা গায়ে সূর্যের আলো মাখুন। শীতের সময় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন।

দুশ্চিন্তা দূরে রাখুন: সবার জীবনেই কাজের চাপ আছে। তাই বলে এ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। এ সমস্যা সমাধানে আপনাকে জানতে হবে কীভাবে আপনি চাপ সামলাবেন। যদি না পারেন তাহলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। এজন্য দৈনন্দিন জীবনের কোনো না কোনো সমস্যার তালিকা তৈরি করুন। এরপর তা সমাধানের উপায় খুঁজুন।

শরীরচর্চা করুন: মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। কারণ যত বেশি সক্রিয় থাকবেন, মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থগুলোও বেড়ে যায়। যা মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে। অন্যদিকে শরীরচর্চার অভাবে মেজাজ খারাপ হতে পারে। পাশাপাশি উদ্বেগ, চাপ, ক্লান্তি ও অলসতা বোধ করতে পারেন। তাই শরীর ও মন দু’টোই ভালো রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।

যা ভালো লাগে, তা-ই করুন: আপনার যা ভালো লাগবে বা করতে ইচ্ছে করবে তা-ই করুন। আপনার যদি ঘুরতে যেতে, শপিং করতে কিংবা ছবি আঁকতে ভালো লাগে তাহলে তা-ই করুন। আপনি যা উপভোগ করেন সেই কাজগুলো যখন করবেন তখন মনও ভালো থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা অন্যের বাধ্যগত হয়ে নিজের খুশিকে দমিয়ে রাখেন, তাদের মধ্যে খিটখিটে মেজাজ ও অসুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়।

মানুষের সঙ্গে মিশে যান: অন্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। যখনই সুযোগ পাবেন মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যদের সঙ্গে মাত্র ১০ মিনিট কথা বলা স্মৃতিশক্তি ও পরীক্ষার স্কোর উন্নত করতে পারে! তাই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান ও মিশুক হওয়ার চেষ্টা করুন।

অন্যের জন্য কিছু করুন: কাউকে সাহায্য করলে নিজের মধ্যেও অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। তাই অন্যের জন্য কিছু করার চেষ্টা করুন। কোনো দরিদ্রকে খাবার বা পোশাক কিনে দিন কিংবা সামান্য অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন। দেখবেন আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।

সাহায্য নিন: আপনি যদি মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করেন তাহলে অন্যের সাহায্য নিন। মুখ বুজে থাকবেন না। নিজের অসুবিধার কথা সবার সঙ্গে শেয়ার করুন। কারণ অত্যাধিক মানসিক চাপে আপনি বিকারগ্রস্তও হয়ে পড়তে পারেন।

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়ক ব্যায়াম

মেডিটেশন: নিজের মনটাকে শান্ত রাখার বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। আর মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মেডিটেশন সবচাইতে ভালো ব্যায়াম। নির্জন একটি স্থানে নিজেকে একাগ্র করে মেডিটেশন করা আপনার মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি, মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

পাজল গেম: পাজল গেম সমাধান করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের অনেক ভালো ব্যায়াম হয়। মস্তিষ্কের এই ধরণের ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কে নতুন নিউরন অর্থাৎ নতুন কোষের জন্ম হয় যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।

স্ট্যাট্রেজি গেম: অনেক ধৈর্য নিয়ে এবং পরিকল্পনা করে যেসকল খেলা, খেলা হয়, যেমনঃ দাবা, কম্পিউটারের নানা গেম ইত্যাদি, সেসকল খেলার মাধ্যমে অনেক ভালো ব্যায়াম হয় মস্তিস্কের। এবং এতে করে ধৈর্য ধারণ ক্ষমতা, পরিকল্পনা করে আগানোর বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়।

নিউরোবিক এক্সারসাইজ: নিউরোবিক এক্সারসাইজ মূলত আমাদের একটির বেশি ইন্দ্রিয় নিয়ে একসাথে কাজ করার বিষয়টিকে বোঝায়। দৈনন্দিন সাধারণ কাজের সাথে আমাদের কল্পনা শক্তি কিংবা চিন্তা করার ক্ষমতা একসাথে মিলিয়ে কাজ করার মাধ্যমেই এই ব্যায়ামটি করা হয়।

কার্ডিওভ্যস্কুলার ফিটনেস: মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার আরেকটি বিশেষ উপায় হচ্ছে কার্ডিওভ্যস্কুলার ট্রেনিং করা। কার্ডিওভ্যস্কুলার ফিটনেস ঠিক থাকলে বয়সের সাথেসাথে মস্তিস্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারানোর বিষয়টি দূর হয়। বরং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ঠিক থাকে এবং স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়া, আলঝেইমার্স রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে ও দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

৩১ আগস্ট ২০২২, ০৯:১৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।