• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাজার গুণের সমাহার ‘কালোজিরা’

হাজার গুণের সমাহার ‘কালোজিরা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

প্রচলিত আছে ‘মৃত্যু ব্যতিত সব রোগের মহৌষধ কালোজিরা’। সুস্বাস্থ্যের জন্য কালোজিরার গুরুত্ব অনেক। কালোজিরার তেল নানা ধরণের ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া অনেকেই কালোজিরা চিবিয়ে খান। মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা আমাদের অনেকেরই জানা।

এতে মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় উপাদান রয়েছে। চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। মাথা ব্যথার উপশমেও কালোজিরার তেল খুবই কার্যকরি।

প্রিয় পাঠক এবারের পর্বে কালোজিরার গুণাগুণ ও উপকারিতা নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। চলুন এক নজরে দেখে নিই-

পরিচয়

কালোজিরার ইংরেজি নাম Black Caraway, Black Cumin, Nigella, Kalojeere এবং Kalonji ইত্যাদি। একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমী গাছের একটি দানা প্রকৃতির ভেষজ উপাদান। কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম Nigella Sativa Linn। আয়র্বেদীয়, ইউনানী, কবিরাজী ও লোকজ চিকিৎসায় কালোজিরার বহুল ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে।

কালিজিরার পুষ্টিগুণ

এতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরার জুড়ি মেলা ভার। এর তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। বর্তমানে বাজারে কালিজিরা ক্যাপসুলও পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন।

এছাড়া পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অর্শ রোগের প্রতিষেধক রয়েছে কালোজিরায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম কালোজিরায় রয়েছে
আমিষ ২১ শতাংশ,
শর্করা ৩৮ শতাংশ এবং
চর্বি বা ভেষজ তেল ৩৫ শতাংশ।

এছাড়া খনিজ উপাদানের মধ্যে কালোজিরায় রয়েছে
প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম
নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম
আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম
ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম
কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম
জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম এবং
ফোলাসিন ৬১০ আইউ। এসব ছাড়াও এতে আরও আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল।

উপকারিতা

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে : স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরার কার্যকারিতা বহুল স্বীকৃত। নিয়মিত এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার খেলে অবসাদ দূর হবে। এতে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

বুকের দুধ বৃদ্ধি করে : যেসব মায়েদের বুকে দুধ কম আসে, তারা প্রতি রাতে শোবার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। ১৫/২০ নিয়মিত এটি খেলে বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে।

আমাশয় নিরাময় : দীর্ঘদিনের আমাশয়ে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য কালোজিরা সবচেয়ে কার্যকরি একটি উপাদান। নিয়মিত এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ খাবেন। আপনার পুরনো আমাশয় বিদাল নেবে।

মাথা ব্যথা নিরাময় : নিয়মিত ১/২ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোভাবে লাগান। অথবা এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে ২/৩ সপ্তাহ খান। মাথা ব্যথা নিরাময় হবে।

সর্দি থেকে মুক্তি : দীর্ঘদিনের সর্দি সমস্যা দূর করতে কালোজিরা হতে পারে দারুণ এক উপাদান। নিয়মিত এক চা চামচ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে দিনে ৩ বার খান। পাশাপাশি মাথা ও ঘাড়ে মালিশ করুন। সর্দি, জ্বর ও কাশি দূর হবে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : এক চা চামচ কালোজিরার গুঁড়া এক কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার করে ৪/৫ সপ্তাহ খান, হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে। কারণ কালোজিরায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কালোজিরা যেন মহৌষধ। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান। এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

যৌন অক্ষমতা দূর করে : যারা কম যৌন আকাঙ্খায় ভুগছেন বা অন্যান্য যৌন সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য কালোজিরা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও কার্যকর একটি ভেষজ উপাদান। নিয়মিত কালোজিরা খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি মেলে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে : যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তারা প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোয়া চিবিয়ে ও এক চামচ কালোজিরা চিবিয়ে খান। অথবা এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন নিয়ম করে খান, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ : দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। এতে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ উন্নত হয়।

বাত ব্যথা নিরাময় : যারা দীর্ঘদিন ধরে বাত ব্যথায় ভুগছেন, তারা ব্যথার স্থান পরিষ্কার করে ওই স্থানে কালোজিরা তেল মালিশ করুন, ব্যথা উপশম হবে। অথবা এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরা সমপরিমান মধু মিশিয়ে দিনে ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ খান, বাত ব্যথা চিরতরে বিদায় নেবে।

পাইলস নিরাময় : কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস আমাদের দেশে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা চামচ কালোজিরার তেল একসঙ্গে প্রতিদিন খালি পেটে পান করুন। ৩/৪ সপ্তাহ নিয়মিত এটি খেলে উপকার পাবেন।

শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগ সারাতে : যারা হাঁপানী বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা খাবার তালিকায় রাখুন। এতে আপনার হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট দূর হবে।

অনিয়মিত মাসিক : নিয়মিত এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে প্রতিদিন ৩ বার খান। অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর হবে।

তথ্যসূত্র : অর্থসূচক ডট কম, ইমেডিকেল ডট কম ডট বিডি ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২১ আগস্ট ২০২১, ০৫:২৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।