• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লবণ-চিনি: স্বাদের খাবার নাকি মৃত্যুর দুয়ার!

লবণ-চিনি: স্বাদের খাবার নাকি মৃত্যুর দুয়ার!

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিংবা চিনি, উভয় অভ্যাসই আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। একাধিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, ভাতের সঙ্গে বাড়তি লবণ খাওয়া ও চিনি খাওয়ার অভ্যাস অসংখ্য রোগের প্রধান কারণ। সুস্থ দেহ ও সুন্দর জীবনের জন্য তাই আজ থেকেই পাত লবণ বা ভাতের সঙ্গে বাড়তি লবণ খাওয়া ছেড়ে দিন। সেই সঙ্গে চা কফিতে অতিরিক্ত চিনি খাওয়া পরিহার করুন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাতে বিবিসি বলছে, স্বল্প মাত্রার কাঁচা লবণ বা চিনি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। কাজেই, মাত্রাতিরিক্ত লবণ বা চিনি পরিহার করার বিকল্প নেই।

প্রিয় পাঠক, আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের খাবার গ্রহণ করে থাকি। আপনি কি জানেন, আমাদের নৈমিত্তিক খাবারের মাঝেই প্রয়োজনীয় লবণ ও সুগার বজায় থাকে। তাই, খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও চিনি না খাওয়াই ভালো।

লবণ কেন এক চামচের বেশি নয়

জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েব জার্নাল হেলথ লাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে ও বিবিসির পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, খাবারের মাধ্যমে প্রতিদিন মানুষের শরীরে যত সোডিয়াম ঢোকে, তার প্রধান উৎস লবণ।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) বলছে, মানুষের দেহ ঠিকভাবে কাজ করার জন্য খুব কম পরিমাণ লবণ দরকার হয়। কিন্তু মানুষ প্রতিদিন সেই মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি লবণ গ্রহণ করছে। সংস্থাটি বলছে, একজন মানুষের সবমিলিয়ে ২,৩০০ মিলিগ্রাম বা এক চা চামচের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।

মিষ্টি কি ক্ষতিকর?

পুষ্টিবিদদের বরাত দিয়ে বিবিসি তাদের নিবন্ধে জানিয়েছে, মানুষের শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইডের বয়স অনুযায়ী চাহিদা আছে। কিন্তু কারও যদি লিভার, কিডনি বা বড় জটিলতা থাকে, তখন সেটার বেশি বা কম হলে সমস্যা তৈরি করতে পারে। কাজেই, সরাসরি লবণ না খাওয়াই উচিত।

যেসব খাবারে লবণ বেশি থাকে

মার্কিন গবেষণা সূত্রে বিবিসি জানিয়েছে, প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেটজাত খাবারে সবচেয়ে বেশি লবণ ও চিনি থাকে। যেমন- মাংসের স্যান্ডউইচ, পিৎজা, ট্যাকোস, সুপ, চিপস, ক্র্যাকার্স, পপকর্ন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা চিকেন ফ্রাই, পাস্তা, বার্গার, ভাজা ডিম বা ডিমের ভাজা আইটেম ইত্যাদি।

গবেষকরা বলছেন, এসব খাবারে লবণের মাত্রার কমবেশি হতে পারে। তবে এসব খাবারে লবণ ছাড়াও বেকিং সোডা, মনো-সোডিয়াম গ্লুটামেট, সোডিয়াম নাইট্রেটের মাত্রা রয়েছে ব্যাপক। তাই, এসব খাবার খেলে দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

শরীর থেকে লবণের মাত্রা কমানোর উপায়

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বিভাগের বরাতে হেলথ লাইন ওয়েব জার্নাল বলছে, খাবারের ভেতরে থাকা লবণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। তাই, বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত এবং প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সামান্য সতর্কতা মেনে চলার মাধ্যমে আপনি নিজেই বাড়তি লবণ ও চিনি খাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে পারেন। উপায় গুলো হলো-

খাবারের লেবেলে থাকা পুষ্টিমান পড়া: প্যাকেটজাত খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের লেবেলে উপাদানের যে বর্ণনা থাকে, সেখান থেকে দিনে কতটুকু সোডিয়াম শরীরে প্রবেশ করছে, তা যাচাই করে নিতে পারেন।

নিজের খাবার নিজে তৈরি করুন: ইনস্ট্যান্ট নুডলস, তৈরি পাস্তা, নানা ধরনের সসের ব্যবহার কমিয়ে দিন। তার চেয়ে ভালো হয়, বাসায় নিজেই নিজের জন্য খাবার তৈরি করুন। এতে খাবারের পুষ্টিমাণ বজায় রাখা সহজ হবে।

সোডিয়ামমুক্ত ফ্লেভার যোগ করুন: রান্নায় লবণের ব্যবহার যতটুকু পারেন কমিয়ে দিন। বিশেষ করে খাবার টেবিলে কাঁচা লবণ খাওয়া পরিহার করতেই হবে।

টাটকা খাবার খান: প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করুন। তাজা ও টাটকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

সস পরিহার করুন: শাকসবজি বা সালাদ খাওয়ার সময় অনেকেই সস ও সিজনিং ব্যবহার করেন। এই অভ্যাস আজই ছেড়ে দিন। সস ও সিজনিং দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

লবণাক্ত খাবার ধুয়ে নিন: সিমের বিচি, টুনা কিংবা প্যাকেটজাত সবজি ও ফল খাওয়ার আগে ভালো মতো ধুয়ে নিন। কারণ, প্যাকেটজাত করার সময় এসব খাবারে বাড়তি লবণে মেশানো হয়।

বিকল্প ব্যবহার করুন: অনেক সময় সালাদের সঙ্গে আমরা সস মিশিয়ে নিই। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি খাবার। সস খাবারে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কাজেই, বাড়তি চিনি ও লবণ খাওয়া পরিহার করতেই হবে।

 

তথ্যসূত্র: দ্য ক্লিনিক ফর অল, উইমেন্স হেলথ ম্যাগ, বিবিসি ও হেলথ লাইন।

০৯ আগস্ট ২০২২, ০৮:৩৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।