• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একটি মসলা খেলেই পালিয়ে যাবে ইউরিক অ্যাসিড

একটি মসলা খেলেই পালিয়ে যাবে ইউরিক অ্যাসিড

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ইউরিক অ্যাসিড একটি মারাত্মক যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার নাম। এটি আপনাকে এমন ভাবে ভোগাবে যা তীব্র ব্যথার শিরোমনি বটে। বর্তমানে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেনম, এমন রোগী প্রায়ই দেখা যায়। বয়স্কদের পাশাপাশি কমবয়সীরাও এই সমস্যার মুখে পড়ছেন। ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণগুলোর একটি অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অত্যধিক প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। কাজেই, যারা শাকসবজি কিংবা ফলমূলের চেয়ে বেশি মাছ-মাংস খান, তাদের ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া অত্যাধিক মদ্যপানও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে কি হয়, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ, প্রাথমিক করণীয় নিয়ে এর আগে আমরা একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছি। আগের পর্ব দেখতে ক্লিক করুন।

এই পর্বে আমরা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে একটি বিশেষ পানীয় নিয়ে আলোচনা করব। যে পানীয় আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা জাদুর মতো কমিয়ে দেবে। তাই, আর দেরি নয়, চলুন দেখে নেয়া যাক বিস্তারিত।

যে মসলায় ম্যাজিক্যালি কমবে ইউরিক অ্যাসিড

জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েব জার্নাল হেলথ লাইন, হেলথ নিউজ টুডে ও টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, আদা, লেবু ও কাচা রসুন ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়তা করে। তবে কাচা হলুদ অথবা হলুদের গুঁড়া দিয়ে বানানো সরবত সবচেয়ে দ্রুত ইউরিক অ্যাসিড কমায়।

গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, কাচা হলুদ অথবা হলুদের গুঁড়া, লেবুর রস, আদা রস ও সামান্য লবণ দিয়ে বানানো সরবত সবচেয়ে দ্রুত ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এই পানীয়টি দেহের বাড়তি ওজন কমাতেও সহায়তা করে।

হলুদ যেভাবে ইউরিক অ্যাসিড কমায়

শুধুমাত্র খাবারের রঙ আনতেই হলুদের ব্যবহার নয়, বরং সুস্বাস্থ্যের জন্যও হলুদের গুরুত্ব অনেক। ভেষজগুণ সমৃদ্ধ হলুদ যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে, গাউট, আর্থ্রাইটিস বা ইউরিক অ্যাসিডের চিকিৎসায় দারুন কার্যকরী এক উপাদান এই হলুদ।

গবেষকরা বলছেন, হলুদে রয়েছে ‘কারকিউমিন’ নামক এক রাসায়নিক উপাদান। যা হলুদের শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে। ২০১৯ সালের প্রাণী গবেষণা ‘আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড থেরাপি’ অনুসারে, কারকিউমিন নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টর-কাপ্পা বি (এনএফ-কাপ্পা বি) নামক একটি প্রোটিনকে দমন করতে পারে। এনএফ-কাপ্পা বি গাউটসহ বিভিন্ন প্রদাহের জন্য দায়ী।

এ ছাড়া ২০১৩ সালে ওপেন জার্নাল অব রিউমাটোলজি অ্যান্ড অটোইমিউন ডিজিজেস’এ প্রকাশিত একটি মানব গবেষণায় কারকিউমিনের প্রদাহ-বিরোধী প্রভাবও উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউরিক অ্যাসিড বা গাউটে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হলুদের নির্যাস গ্রহণ করার পরে স্বস্তি অনুভব করেন। কারকিউমিনের ক্ষমতার বলে এনএফ-কাপ্পা বি ব্লক করার মাধ্যমেই দ্রুত প্রদাহ কমে যায় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

সবশেষ ২০১৮ সালে ‘বিএমসি কমপ্লিমেন্টরি অ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিন’ এর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রদাহ কমাতে হলুদের কারকিউমিন খুবই কার্যকরী। যা আর্থ্রাইটিস সম্পর্কিত জয়েন্টেও ব্যথাও মুহূর্তেই সারাতে পারে।

এছাড়া হলুদে থাকা অ্যন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র‌্যাডিকেল (কোষের ক্ষতি করে যে অণু) ধ্বংস করে। যদি আপনার শরীরে ফ্রি র‌্যাডিকেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভারসাম্যহীনতা থাকে, তাহলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেখা দেয়। আর অক্সিডেটিভ স্ট্রেসই শরীরে বিভিন্ন প্রদাহের সৃষ্টি করে।

জার্নাল অব ফুড কোয়ালিটির ২০১৭ সালের এক নিবন্ধ অনুসারে, হলুদে থাকে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য কারকিউমিনসহ ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও পলিফেনল থেকে আসে। এর মানে হলো হলুদ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে গাউটের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

যেভাবে খাবেন হলুদ

স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যার সমাধানে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় হলুদ রাখা যেতে পারে। বিভিন্ন খাবারে মিশিয়ে কিংবা হলুদের চা, হলুদের গুঁড়ার মিশ্রণ পান করাও স্বাস্থ্য সম্মত।

এ ছাড়া সকালে এক টুকরো কাঁচা হলুদ চিবিয়ে বা রস করে খেলে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি হাঁটু, গোড়ালি কিংবা পায়ের আঙুল যেখানেই ফুলে ব্যথা হোক না কেন হলুদের পেস্ট লাগালে মুহূর্তেই আপনি স্বস্তি পাবেন।

কতটুকু হলুদ খাবেন

পুষ্টিবিদরা ও আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের পরামর্শ অনুযায়ী, অস্টিওআর্থারাইটিসের জন্য দিনে ৩ বার ৪০০-৬০০ মিলিগ্রাম হলুদের ক্যাপসুল খাওয়া নিরাপদ। তবে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগীরা দিনে ২ বার ৫০০ মিলিগ্রাম হলুদের সাপ্লিমেন্ট ক্যাপসুল খেতে পারবেন।

এ ছাড়া যারা জটিল কোনো রোগ বা দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমস্যায় ভুগছেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হলুদ গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করার বিকল্প নেই। খাদ্যতালিকায় সতেজ শাকসবজি ও ফলমূল বেশি রাখতে হবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের দিনে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। দিন অন্তত ৩০ মিনিট হাটাহাটি করতে হবে।

সেই সঙ্গে মসুর ডাল, মটর ডাল, গরু-খাসির মাংস, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, অ্যালকোহলসহ ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

০৩ আগস্ট ২০২২, ০৬:৩৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।