• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুস্থতার মূল হজমশক্তি: বাড়িয়ে নিন সহজে

সুস্থতার মূল হজমশক্তি: বাড়িয়ে নিন সহজে

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

কথায় আছে ‘ পেট ভালো তো শরীর ভালো, শরীর ভালো তো সব ভালো’। আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার পেট ভালো আছে? আপনার যদি অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি বলতে পারেন আপনার পেট ভালো আছে। পেটের অ্যাসিডিটির অন্যতম কারণ হজমশক্তি কমে যাওয়া। আমাদের হজমশক্তি কমে গেলে খাবার পরিপাকে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা ও অস্বস্তি তৈরি হয়।

কাজেই সুস্থ জীবনের জন্য পেটের ক্ষমতা বা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। হজমশক্তি বৃদ্ধি পেলে অ্যাসিডিটি, কোষ্টকাঠিন্য, ক্ষুধামন্দা, পেটফাঁপা, ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির মতো সমস্যা দূর হয়।

প্রিয় পাঠক, আপনি চাইলে আপনার হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারেন। এজন্য আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে আনতে হবে পরিবর্তন। কাজেই, চলুন দেখে নেয়া যাক হজমশক্তি বৃদ্ধি ও হজমজনিত সমস্যার আদ্যোপান্ত।

হজমশক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েব জার্নাল হেলথ লাইন ও হেলথ বেনেফিট টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধে পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য হজমশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হলে বা কোন ধরণের সমস্যা দেখা দিলে পুরো দেহই স্থবির হয়ে পড়তে পারে। দেহের সাভাবিক শোষণ ক্ষমতা কমে গেলে হজমশক্তি লোপ পায়।

একটা খাবারের সাথে আরেকটা খাবার মিলে দেহের শোষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এটি বাধাগ্রস্ত হলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া লিপিড প্রোফাইল বেড়ে যাওয়া, ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

হজমশক্তি কমে গেলে যে ক্ষতি

ওজন বেড়ে যেতে পারে: পুষ্টিবিদদের বরাত দিয়ে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারনেই মূলত ওজন বৃদ্ধি পায়। বর্তমান সময়ে স্থুলতা একটি বহুল পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, যারাই স্থুলতায় ভুগছেন, তাদের অধিকাংশেরই হজমশক্তি কম।

পুষ্টিহীনতা: হজম সাভাবিক ভাবে না হলে দেহের ওজন বাড়ে। এ ছাড়া অ্যাসিডিট ও অস্বস্তি তৈরি হয় পেটের অভ্যন্তরে। ফলে অনেকেই খাবার গ্রহণে অনীহা দেখান। এতে করে দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি তৈরি হয়।

শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়: পুষ্টিবিদ এবং অ্যাসোসিয়েশন অব নিউট্রিশনিস্ট এন্ড ডাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরা’র বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, হজম প্রক্রিয়া গর্ভবতী মা ও শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না থাকলে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া নিশ্চিত হয় না। ফলে গর্ভজাত শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে: হজমশক্তি কমে গেলে খাবার গ্রহণে অনীহা তৈরি হয়। এ ছাড়া দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পায়।

কিভাবে বাড়াবেন হজমশক্তি

পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, একেক জনের হজম ক্ষমতা বা মেটাবলিজিম একেক রকম। অনেক সময় দেখা যায় যে, একই রকম খাবার খেয়েও একজন মোটা হয় কিন্তু আরেক জন সাভাবিক থাকেন। যারা হোস্টেলে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এ ধরণের সমস্যা খুবই কমন। তাই হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেমন-

পর্যবেক্ষণ: আপনি খেয়াল করুন, কোন কোন খাবার খেলে আপনার হজমে সমস্যা হচ্ছে। অনেকে বুঝেই না যে, তার কোন কোন খাবার হজম হতে সমস্যা হচ্ছে। তাই, আগে এমন খাবার বাছাই করে ফেলুন, যে খাবারগুলো খেলে আপনার হজমে সমস্যা হয়। এরপর সেই খাবারগুলো পরিহার করুন। যেমন- ভাজাপোড়া খাবার, মসলা জাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার ইত্যাদি।

শরীর চর্চা করুন: শরীর চর্চার কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো ধরণের রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য শরীরচর্চা খুবই জরুরি। বিশেষ করে, হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য শরীর চর্চার বিকল্প নেই। পুষ্টিবিদরা বলছেন, মেটাবলিজম বা হজমশক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ মানুষের কোমরের দিকটায় বা ডায়াফ্রামের ওপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত থাকে। তাদের মতে, যেসব ব্যায়াম শরীরের মাঝের অংশের কর্মকাণ্ড যত ভাল হবে হজম প্রক্রিয়া তত উন্নত হবে। তাই, নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

খাবার নির্বাচন: হজমশক্তি সবল করতে হলে বাছাই করা খাবার খান। প্রচুর পরিমাণে সতেজ শাক-সবজি খেতে পারেন। মাংস খেতে হলে তার সঙ্গে লেবু রাখুন। প্রতিবার খাওয়া শেষ করে অল্প পরিমাণ লেবু-পানি খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়। খাওয়ার সময় জিহ্বায় একটু লবণ লাগিয়ে নিলেও খাবার হজম হয় দ্রুত।

চিবিয়ে চিবিয়ে খাবার খান: খাওয়ার সময় অনেকেই তাড়াহুড়া করেন। এই অভ্যাসটি পরিত্যাগ করুন। খাওয়ার সময় অন্তত এক একবার খাবার মুখে দিয়ে তা ৩০ থেকে ৪০ বার চিবিয়ে নিন। এতে খাবার হজম হবে সহজে।

টক দই খেতে পারেন: টক দই হজমশক্তি বৃদ্ধিতে বুস্টারের মতো কাজ করে। কারণ, টক দইয়ে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা খাবার হজমে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

পর্যাপ্ত ঘুমান: রাত জেগে থাকাটা হজমের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, রাতের বেলা পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। তাই, রাতে ফুসফুসের বেশিরভাগ অংশ অব্যবহৃত থাকে। এ কারণে পুরোপুরি শ্বাস নেয়া সম্ভব হয় না। কাজেই, রাতে বেশি সময় জেগে থাকলে মানুষের সব ইন্দ্রিয় কাজ করে। এর ফলে হজমশক্তি কমতে শুরু করে।

হজমশক্তি বাড়াতে যা খাবেন

⇒ খাবারের সঙ্গে লেবু রাখতে পারেন। লেবু খুব সহজে খাবার হজম করতে সাহায্য করে। চাইলে খাওয়ার পর লেবুপানি খেতে পারেন।

⇒ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খান। ক্যালসিয়াম আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অনেকের দুধ খেলে অ্যাসিডিটি বেড়ে যায়। যাদের এই সমস্যা আছে তারা গরম দুধ সর ছাড়া খাবেন।

⇒ দিনে দুইবার গ্রিন টি বা পুদিনাপাতার চা পান করতে পারেন। এতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট খাবার হজমে সাহায্য করে।

⇒ খাদ্যতালিকায় প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার রাখুন। আঁশযুক্ত খাবার সহজে পানি শোষণ করে, হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত শাকসবজি, ফল, সালাদ, চিয়া সিড, ইসবগুল খেতে পারেন।

⇒ প্রাপ্ত বয়স্করা দিনে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করুন। মনে রাখবেন, পানি ছাড়া কোনো খাবারই সঠিকভাবে হজম হয় না।

⇒ রাতের খাবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে খেয়ে নিন। গভীর রাতে খাবার খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন।

⇒ দিন-রাত মিলে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান। ভালো ঘুম আপনার হজমশক্তি ভালো করবে।

⇒ অতিরিক্ত তেল, ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাপোড়া ও ধুমপান পরিহার করুন।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন ও হেলথ নিউজ টুডে।

০২ আগস্ট ২০২২, ০৮:৪৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।