• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউরিক অ্যাসিড: যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় আপনার হাতেই

ইউরিক অ্যাসিড: যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় আপনার হাতেই

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ইউরিক অ্যাসিডজনিত সমস্যায় ভুগছেন। গাঁটের ব্যথা নিয়ে শয্যশায়ী আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। আমেরিকান কলেজ অফ রিউম্যাটোলজির এক গবেষণাপত্র এই তথ্য জানিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

প্রিয় পাঠক, ইউরিক অ্যাসিডজনিত সমস্যায় যারা কষ্ট পাচ্ছেন, আমাদের এই পর্ব তাদের জন্য। চলুন দেখে নিই বিস্তারিত।

ইউরিক অ্যাসিড কি

কলকাতার জনপ্রিয় চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকারের বরাতে আনন্দবাজারের নিবন্ধে বলা হয়েছে, খাওয়া কমালেই ইউরিক অ্যাসিড কমে না। বরং খাবার হজমের সময় ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এটা মূত্রের স্বাভাবিক উপাদান। মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেলে বা ওজন বাড়লে কখনও কখনও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়।

‘বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড শরীরের অস্থিসন্ধি ও মূত্রনালীতে থিতিয়ে পড়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। থিতিয়ে পড়া ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টালের আকার নেয়। এটি গাঁটে ব্যথা ও প্রস্রাবের সংক্রমণ ডেকে আনে। এ ছাড়া কিডনিতে পাথরও জমতে পারে। তাই, সকর্ত হতে হবে এখনই।

কেন বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড

আমাদের দেহে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, বাইকার্বনেট বা এলকালাইন অর্থাৎ ইলেকট্রোলাইটসের ব্যালেন্স রক্ষায় ইউরিক অ্যাসিড ভূমিকা রাখে। সবার রক্তে এটি খুব অল্প পরিমাণে থাকে, যা মূলত দেহের ডেড সেল এবং খাদ্যের উপাদান পিউরিন থেকে উৎপন্ন হয়। তবে এটি আমাদের দেহের একটি টক্সিক উপাদান।

ইউরিক অ্যাসিডের ঝুঁকিতে কারা

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে মাছ-মাংস খান, তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাবার ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া মদ্যপান ও কার্বোনেটেড কোলা জাতীয় ঠাণ্ডা পানীয় খাওয়ার কারণেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে। আবার স্বাভাবিকের চেয়ে ওজন বেশি হলেও ইউরিক অ্যাসিডের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষকদের আরেকটি অংশ বলছে, এই সমস্যাটি কিছুটা বংশগতও বটে। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার প্রবণতা বেশি। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, কিডনির অসুখ থাকলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে।

যে খাবারে বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড

⇒ কৃত্রিম রং, চিনি বা কর্ন সিরাপ দেয়া খাবার,
⇒ কোলা জাতীয় পানীয়, রং দেওয়া জেলি, জ্যাম, সিরাপ, কৌট বন্দি ফ্রুট জুস,
⇒ স্মোকড ও ক্যানড ফুড,
⇒ আচার, চানাচুর, নোনা মাছ,
⇒ পালং শাক, বিনস, বরবটি, পুইশাক, পুইফল, কচুর লতি,
⇒ শিম, শিমের বিচি, কড়াইশুঁটি, ঢ্যাঁড়স বা টোম্যাটো,
⇒ মুসুর ডাল, বিউলি ডাল, মাটন, সমুদ্রের মাছ, মাছ, চিকেন বা ডিমের কুসুম।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে করণীয়

◊ দৈনন্দিন খাবারে আমিষ কমিয়ে দিন। দিনে সব মিলিয়ে দিনে ৫০ গ্রামের বেশি আমিষ নয়।
◊ মাছের মাথা, ডিম, গরু, খাসির মাংস, কলিজা ও প্রাণীর অঙ্গপ্রতঙ্গ খাওয়া পরিহার করুন।
◊ দিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করুন।
◊ শিমের বিচি, মটরশুটি, চানাচুর, সব রকমের ডাল খাওয়া বাদ দিন।
◊ ওজন স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
◊ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার ও ফলমূল বেশি খান।

ইউরিক এসিড যেভাবে বাড়ে

আমরা যা খাই তার যতটুকু পুষ্টি উপাদান দেহের প্রয়োজন, শোষণ ও বিপাকের মাধ্যমে সে চাহিদা পূরণের পর বাকিটা দেহ থেকে বর্জ্য হিসাবে মল, মূত্র, ঘাম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ইউরিক এসিডও এমন একটি উপাদান, যা দেহে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে তা দেহ থেকে অপসারণের মাধ্যমে আমাদের দেহে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে।

স্বাভাবিকভাবে ইউরিক এসিড পিউরিন সমৃদ্ধ গৃহীত খাদ্য থেকে আমাদের দেহের যকৃতে উৎপন্ন হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে কিডনিতে পৌঁছায়। কিডনি একে দেহ থেকে বের করে দেয়।

দেহে ইউরিক এসিড কতটুকু থাকা প্রয়োজন

সাধারণত ইউরিক এসিড পরিমাণ পূর্ণ বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৭ মিলিগ্রাম এবং নারীদের ৬ মিলিগ্রাম থাকা উচিত। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এর মাত্রা জেনে নেয়া উচিত।

ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে যে খাবার খাওয়া যায়

প্রাণীজ আমিষ: বড় ও ছোট মাছ (পরিমিত), মুরগীর মাংস, ডিম, লো ফ্যাট দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার।

ভাত-রুটি: লালচাল, লাল গমের আটা, ওটস, সাগু, ভুট্টা, চিড়া।

শাক-সবজি: লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, আলু, মিষ্টি আলু, পটল, ঝিংগা, চিচিংগা, করলা, কাকরোল, কলার থোড়, মোচা, সবুজ কলমি শাক, লাউ বা কুমড়ো শাক, গাজর, মূলা, বিটরুট, ক্যাপ্সিকাম, বাধাকপি ইত্যাদি।

ফল: কমলা, মাল্টা, লেবু, আমলকি, জাম্বুরা, পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, আমড়া, আনারস, জাম, বেদানা, খেজুর ইত্যাদি খাওয়া যাবে।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন ও ওয়েব এমডি।

০১ আগস্ট ২০২২, ০৮:৪৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।