• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্ভিজ নাকি প্রাণিজ আমিষ: সেরার সেরা

উদ্ভিজ নাকি প্রাণিজ আমিষ: সেরার সেরা

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আমিষ থাকা জরুরি। আমিষ একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। আমিষের চাহিদা পূরণে আমরা সাধারণত মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের ওপর নির্ভর করে থাকি। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা দরকার, প্রাণিজ আমিষ ছাড়াও প্রকৃতিতে এমন কিছু উদ্ভিদ রয়েছে, যেসব উদ্ভিদে রয়েছে পর্যাপ্ত আমিষ।

মনে রাখবেন, প্রোটিন আমাদের শরীরের পুষ্টি ও শক্তি জোগায়। কারণ প্রোটিন একধরণের ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদান। প্রোটিনই আপনার মাসল তৈরি, শক্তিশালী ও মেরামত করে।

প্রাণিজ আমিষের উৎস মাছ, ডিম, দুধ ও মাংস। আমাদের দেশে মাছ ও মাংস উৎপাদন নিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েই চলেছে। মাছ ও মাংস উৎপাদনে প্রাণীদের খাওয়ানো হচ্ছে ক্ষতিকর সব খাবার। যার প্রভাব মানুষের দেহেও প্রকাশ পাচ্ছে। তাই, নিরাপদে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে উদ্ভিজ আমিষ হতে পারে আদর্শ উপায়।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক উদ্ভিজ আমিষের আদ্যোপান্ত-

উদ্ভিজ আমিষ কী?

প্রকৃতিতে এমন অনেক শাক-সবজি, দানা ও বীজ জাতীয় খাদ্য ও খাদ্যশস্য রয়েছে, যেগুলো থেকে আমরা আমিষ পেতে পারি। কাঁঠালের বিচি, বাদাম, ছোলাবুট, মসুর ডাল, গম, সীমের বিচিসহ সব রকমের ডালে রয়েছে প্রচুর আমিষ। এই আমিষগুলোই মূলত উদ্ভিজ আমিষ। তবে উদ্ভিজ আমিষের সর্বোত্তম উৎস ডাল। সব ধরণের ডালে রয়েছে সবচেয়ে বেশি আমিষ।

আমিষ কেন প্রয়োজন

আমিষ বা প্রোটিনের মৌলিক উপাদান হচ্ছে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। এছাড়াও প্রোটিনে থাকে নাইট্রোজেন। প্রোটিন বা আমিষকে বিশ্লেষণ করলে একাধিক এমাইনো এসিড পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে প্রায় ২০ প্রকার এসিড আছে। সকল এমাইনো এসিডের মধ্যে ৮টি এমাইনো এসিডকে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বলা হয়। কারণ শরীর নিজে এগুলো তৈরি করতে পারে না। বিশেষ বিশেষ খাদ্যের মাধ্যমে বাইরে থেকে এগুলো সরবরাহ করতে হয়। আমরা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খাওয়ার পর তা পরিপাক হয়ে বিভিন্ন ধরনের এমাইনো এসিডে পরিণত হয় এবং বিশোধনের মাধ্যমে আমাদের রক্তে মিশে যায়। রক্ত এমাইনো এসিডকে দেহের কোষে পৌঁছে দেয়। কোষ প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির কাজে তা ব্যবহার করে।

আমিষের উপকারিতা

⇒ আমিষ বা প্রোটিনের প্রথম এবং প্রধান কাজ দেহ গঠনে সহায়তা করে।
⇒ দেহের ক্ষয়পূরণের জন্য নতুন কোষ সৃষ্টি করে।
⇒ দেহের হাড়, পেশী, অঙ্গ, তন্ত্র, রক্ত কণিকা গঠনেও আমিষের ভূমিকা ব্যাপক।
⇒ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
⇒ রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় প্রোটিন থেকে।
⇒ মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ পেপসিন ও ট্রিপসিনসহ অন্যান্য জারক রস এবং হরমোন তৈরি করে আমিষ।
⇒ দেহে কার্বোহাইড্রেড বা শর্করা ও স্নেহ খাদ্যের অভাব হলে সঞ্চিত প্রোটিন ভেঙ্গে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয়।

আমিষের অভাবে যা হয়

খাদ্যে প্রোটিনের অভাব হলে মেরাসমাস ও কোয়াশিয়রকর নামক দুটি রোগ হয়। মেরাসমাস রোগে পেশী ও মেদ ক্ষয় হয় ও চামড়া কুঁচকে যায়, দেহের বৃদ্ধি থেমে যায়, ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৬০ ভাগ কমে যায়, কম বয়সে এ রোগ হলে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

সাধারণত ২-৪ বছর বয়সে শিশুদের খাদ্যে আমিষের অভাব হলে কোয়াশিয়রকর রোগ হয়। এ রোগে শিশুদের দেহের বৃদ্ধি থেমে যায়, পেশি ক্ষয় হয়ে থাকে, পানি জমে শরীর ফুলে যায়, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

প্রতিদিন আমিষ প্রয়োজন কতটুকু

পুষ্টিবিদরা বলছেন, দেহের আকার, বয়স, পরিপাক ক্ষমতা ও শোষণ ক্ষমতার ওপর আমিষ বা প্রোটিনের চাহিদা নির্ভর করে। একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের প্রতি কিলোগ্রাম দেহের ওজনের জন্য দৈনিক ১ গ্রাম প্রোটিন দরকার। শিশুদের জন্য প্রতি কিলোগ্রাম ওজনে ১.৫-২.৪ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। প্রসূতি মায়ের নিজের চাহিদা পূরণ করে দৈনিক অতিরিক্ত ২০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা দরকার।

উদ্ভিজ নাকি প্রাণিজ আমিষ সেরা

স্বাস্থ্যবিষয়ক জনপ্রিয় মার্কিন ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইনে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, উদ্ভিজ ও প্রাণিজ; এই দুই ধরনের আমিষেই বিশেষ কিছু গুণাগুণ ও ঝুঁকি আছে। উদ্ভিজ্জ আমিষে থাকে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, কিছু অ্যান্টি-অক্সিডান্টস এবং প্রচুর ফাইবার। কাজেই উদ্ভিজ আমিষ হজমশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই উপযোগী।

আবার উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বা আমিষে আয়রন ও ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি থাকে। অন্যদিকে প্রাণিজ প্রোটিনে কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে বেশি। যারা দেহের পেশী বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন, তারা সাধারণত প্রাণিজ প্রোটিনের ওপরেই বেশি ভরসা রাখেন।

তবে পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, সুস্থ ও সুঠাম পেশীবহুল শরীর পেতে উদ্ভিজ ও প্রাণিজ উভয় প্রকার আমিষই দরকার। তবে এই দুই প্রকার আমিষের একটি ভারসাম্য তৈরি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডায়েটিশিয়ান, শরীরচর্চাবিদের পরামর্শ নেয়া উচিত।

আমিষ পেতে কিছু নিয়ম মানুন

⇔ প্রতিদিন নিয়ম করে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লিটার পানি পান করুন।
⇔ অলিভ অয়েল, মেডিসিনাল নারিকেলের তেল, বাদাম, বীজ, অ্যাভোক্যাডো, তিষি, তিলের তেল, গ্রাস ফেড ঘি বা বাটার খেতে পারেন।
⇔ প্রতিদিন ৮৫% শস্যজাত আমিষ খেতে হবে। যেমন- ডাল, ছোলা।
⇔ প্রতিদিন প্রাণিজ আমিষ খাবেন ১৫ শতাংশ হারে।
⇔ খাদ্যতালিকায় রাখুন বাদাম জাতীয় দানা। যেমন- কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, অলনাট, পাইন নাটস, ব্রাজিল নাটস ইত্যাদি।

উদ্ভিজ আমিষের প্রাকৃতিক উৎস

বীজজাতীয় খাবার: বিভিন্ন ধরনের ডাল, শিমের বিচি, মটরশুঁটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত আমিষ বা প্রোটিন। এসব উপাদান ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়তা করে।

ছানা: চর্বি কম এমন দুধ ফুটিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। এবার এতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে রেখে দিন। এতে দুধ ভেঙে ছানা তৈরি হবে। এবার পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। এটি ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী।

বাদাম ও কুমড়ার বিচি: কাজুবাদাম, চিনা বাদাম, পেস্তাবাদামসহ সব ধরণের বাদামে রয়েছে আমিষ। এ ছাড়া সূর্যমুখীর বীজ, তিসি ও কুমড়ার বিচিতে আছে পর্যাপ্ত আমিষ।

গমের ভুসি: খাবারে গমের ভুসি মেশানো কিংবা এ থেকে তৈরি রুটির উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। লাল গমের আটায় রয়েছে প্রোটিন।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও এনডিটিভি।

২৭ জুলাই ২০২২, ০৭:৩৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।