• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানিজ তাজিমার ‘কোবে বিফ’ : এক কেজি মাংসের এত দাম!

জাপানিজ তাজিমার ‘কোবে বিফ’ : এক কেজি মাংসের এত দাম!

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

ভোজনরসিক মানুষ পকেটের চিন্তা করে না। চমকপ্রদ খাবারের স্বাদ নিতে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। যারা খেতে ভালোবাসে, তাদের কাছে পছন্দের খাবারের দাম কোনো ব্যাপারই না। পৃথিবীতে বোধহয় সবচেয়ে সর্বজন পছন্দনীয় খাবার ‘মাংস’। পাখি প্রজাতির প্রাণী কিংবা গরু, ছাগল, উট, মহিষ, ভেঁড়া; ভোজনরসিকদের কাছে মাংস যেন অমৃত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জয়জয়কার এখন। ইউটিউব-ফেসবুকে ফুড রিভিউ এখন এক নতুন সংস্কৃতি। তাই, খুব সহজেই এক দেশের খাবার অন্য দেশে পরিচিতি পাচ্ছে, হয়ে উঠছে জনপ্রিয়। বিশ্বব্যাপী তেমনই একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ‘মাংস’ বা গরুর মাংসের সন্ধান আমরা পেয়েছি। যার নাম ‘কোবে বিফ’।

এটি মূলত জাপানে পাওয়া যায়। তাজিমা নামের এক প্রজাতির গরু থেকে এই মাংস তৈরি করা হয়। এই গরুর প্রতি কেজি মাংসের দাম ২৪ হাজার থেকে ৩৬ হাজার পর্যন্ত। তাজিমা গরুর কোবে মাংসের ‘জিওগ্র্যাফিকাল ইন্ডিকেশন’ বা ভৌগলিক নির্দেশক স্বত্ব লাভ করেছে জাপান। যদিও আমেরিকা এই গরুর মাংস বিক্রি করে থাকে।

প্রিয় পাঠক চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে কোবে গরুতে ও এই গরুর মাংসের দাম কেনই বা আকাশছোঁয়া।

কোবে গরুর মাংস কি?

তাজিমা প্রজাতির গরু জাপানেই পাওয়া যায়। বিশেষ খাদ্যাভাস, পরিচর্যা ও ম্যাসাজের মাধ্যমে তাজিমা গরু থেকে কোবে মাংস তৈরি হয়। জাপানে এই গরু ঐতিহ্যবাহী। বিশেষ করে মাংসের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে তাজিমা গরু লালনপালন করা হয়। জাপানের হোয়েগা অঞ্চলে তাজিমা গরু লালনপালন করা হয়। এই গরু থেকেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোবে মাংস উৎপাদন করা হয়।

কোবে মাংসের জন্য তাজিমার খাবার

জাপানিজরা সব কাজের ব্যাপারেই আন্তরিক ও কর্মঠ। কোবে মাংসের জন্য তাজিমা গরুর লালনপালনেও জাপানিজরা যত্ন ও সেবার কোনো কমতি রাখে না। কথিত আছে, জাপানে এই গরুকে প্রতিদিন এক লিটার করে বিয়ার বা মদ খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি দানা জাতীয় খাবার তো আছেই।

মাংসের দাম যত

কোবে বিফ বা জাপানিজ কোবে গরুর প্রতি কেজি মাংসের দাম ২৪ হাজার টাকা থেকে শুরু। সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয় এক কেজি কোবে গরুর মাংস।

কেন এত দাম

কোবে গরুর মাংস তুলতুলে ও নরম। পাতলা নরম আঁশযুক্ত মাংসের ভেতরে চর্বি মিশে থাকে। মাংস থেকে চর্বি আলাদা করার মতো চর্বি নয়। পুষ্টিবিদদের দাবি, কোবে গরুর মাংসে ক্ষতিকর কোলস্টেরল থাকে না। এই গরুকে নিয়মিত বিয়ার বা মদ খাওয়ানোর ফলে দেহে প্রচুর চর্বি জমে। এই চর্বি মাংসকে নরম করে।

তবে মাংসে চর্বির পরিমাণ কমাতে প্রতিদিন তাজিমা গরুকে ন্যূনতম ৮ ঘণ্টা হাটানো হয়। সেই সঙ্গে এই গরুর দেহ ম্যাসাজ করা হয় নিয়মিত। হাটানো ও ম্যাসাজের ওপর নির্ভর করে কোবে মাংসের মান কেমন হবে।

কোবে বিফের চাহিদার নেপথ্যে

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ভোজনরসিকদের পছন্দের প্রথম সারিতে রয়েছে কোবে বিফ। বিশেষ করে বিফ স্টেক যারা খেতে ভালোবাসেন, তাদের কাছে কোবে বিফ পছন্দের শীর্ষে। কারণ, এই গরুর মাংস নরম ও মিহি চর্বিযুক্ত। এতে কোলেস্টেরল নেই, রয়েছে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাট। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি।

আমেরিকায় যেভাবে এলো কোবে মাংস

‘কোবে’ শব্দটার ওপর জাপানের ‘জিআই’ স্বত্ব আমেরিকা মানে না। যুক্তরাষ্ট্রও কোবে গরুর মাংস বিক্রি করে। আমেরিকার রেস্টুরেন্টগুলোতেও এই মাংস পাওয়া যায়। তবে দাম প্রতি কেজি ১৬ হাজার টাকার মতো। কথিত আছে, ১৯৭৬ সালে জাপান থেকে চারটি টাজিমা জাতের গরু নিয়ে যায় আমেরিকা। জাপানিজরা এই তাজিমা জাতের গরু থেকেই কোবে বীফ বানায়। ধারণা করা হয়, জাপান থেকে নেয়া চারটি গরু দিয়েই আমেরিকা নিজস্ব ভাবে কোবে বীফের উৎপাদন শুরু করে। যা বিশ্বে আমেরিকান জাপানিজ কোবে বীফ নামে পরিচিত।

কোবে গরুর মাংস কেন বিখ্যাত

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে মনে নিশ্চয় মনে প্রশ্ন জেগেছে, কি কারণে কোবে গরুর মাংসের দাম এত বেশি? কেনই বা এই মাংস মানুষ এত পছন্দ করে? কোবে গরুর মাংস বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ এর ‘গন্ধ’ ও অনন ‘স্বাদ’। বিশ্বের অন্য কোনো গরুর মাংসে কোবে গরুর মাংসের স্বাদ পাওয়া যায়না। মাংসে চর্বির পরিমানের ওপরই নাকি কোবে গরুর মাংসের মান নির্ভর করে। এ ছাড়া এই মাংসে থাকে না কোনো ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট।

আপনি জানেন কি?

→ কোবে গরুর মাংসের মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য জাপানে বিশেষ আইন রয়েছে।
→ জাপানের হোয়েগো অঞ্চল ব্যতীত অন্য কোনো অঞ্চল কোবে গরুর মাংস তৈরির অনুমোদন পায়নি।
→ এমনকি ‘কোবে’ শব্দটির একমাত্র স্বত্বাধিকারীও জাপান।
→ শুধুমাত্র কালো রঙের তাজিমা গরু থেকেই কোবে মাংস তৈরি করা হয়। অন্য রঙের তাজিমা গরু থেকে কোবে মাংস তৈরি করা হয়না।
→ কোবে মাংস উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াটি জাপান সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

 

তথ্যসূত্র- রিসার্চগেইট ডট কম, ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, উইকিপিডিয়া ও তাজিমা ডট কম ইউকে।

১৬ জুলাই ২০২২, ০১:১১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।