• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোগ নিরাময়ে প্রকৃতির সেরা উপাদান ‘নিম’

রোগ নিরাময়ে প্রকৃতির সেরা উপাদান ‘নিম’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

‘ঘরের দক্ষিণে নিমগাছ থাকলে আর বদ্যি লাগে না’ আবহমান গ্রাম-বাংলায় এটি বহুল প্রচলিত। নিম একটি অনন্য ওষুধিগুণে ভরা প্রাকৃতিক উপাদান। ফল, পাতা, বাঁকল কিংবা শিকড়, নিম গাছের সবই উপকারি।

এই পর্বে চলুন দেখে নেওয়া যাক নিমপাতার ভেষজ গুণাগুণ সম্পর্কে-

পরিচয়

নিমের বৈজ্ঞানিক নাম AZADIRACHTA INDICA। এটি ওষুধি গাছ। এর ডাল, পাতা, রস ও ফল রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকরি। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। ভারত এবং বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই নিম গাছ জন্মে। তবে এটি সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়ায় বেশি জন্মে। নিমের নানা গুণাগুণের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গাছকে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

নিমপাতা ও নিমের উপকারিতা

খোস পাচড়া বা চুলকানি নিরাময় : নিম পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে দীর্ঘদিনের খোস পাচড়া ও চুলকানি নিরাময় হয়। নিমপাতা গুঁড়া করে সরিষার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলকানির জায়গায় লাগালে দারুণ উপকারিতা পাওয়া যায়।

কৃমিনাশক : পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। শিশুদের পেট বড় ও চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। আপনি কি জানেন, কৃমিনাশক হিসেবে নিমপাতা খুবই কার্যকরি। ৫০ গ্রাম নিমগাছের মূলের ছাল গুঁড়া করে সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩ বার শিশুকে খাওয়ান। কৃমি বিনাশ হবে।

পায়ের দুর্গন্ধ দূর করে : জুতা-মোজা পরলে যাদের পায়ে দুর্গন্ধ হয়, তারা নিমপাতা সেদ্ধ করা পানিতে পা ডুবয়ে রাখতে পারেন। এতে পায়ের দুর্গন্ধ দূর হবে।

রক্ত পরিষ্কার করে : নিমপাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতেও সহায়তা করে।

ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা : রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। নিমপাতা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ত্বকের ইনফেকশন ও দাগ দূর করতে নিমপাতা বেটে মুখে লাগাতে পারেন। এমনকি নিমপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে বড়ি বানিয়েও খেতে পারেন। ত্বকের ইনফেকশন ও ফাঙ্গাস ধ্বংস করতে নিমপাতার জুড়ি মেলা ভার।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে নিমের মতো কার্যকরি অন্য কিছু নেই। রক্তের সুগার দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে নিমপাতার রস। এটি রক্তনালীকে প্রসারিত করে। প্রতিদিন নিয়মিত কচি নিমপাতার রস খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে বেশি উপকার পেতে চাইলে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিমপাতা বেটে খেয়ে নিন। ডায়াবেটিস পালাবে।

ওজন কমায় : আপনি যদি শরীরের অতিরিক্ত মেদ চর্বি ঝরিয়ে ওজন কমাতে চান, তাহলে নিমফুলের জুস খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি আপনার শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে দেবে। নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। একমুঠো নিমফুল গুঁড়া করে মধু ও আধা চামচ লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে পান করুন, আপনার ওজন কমবে নিশ্চিত।

দাঁতের সুরক্ষায় নিম: দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিমের ডাল খুবই কার্যকরি। প্রাচীনকাল থেকেই দাঁতের মাজন হিসেবে নিমের ডাল ও নিমের গুঁড়া ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। দাঁত ও মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হওয়া, দাঁতের সেনসিটিভিটি ও ক্ষয়রোধে নিম এক মহৌষধ।

চুল ও মাথার ত্বকের যত্নে : চুল পড়া রোধ করতে ও মাথার ত্বকের ইনফেকশন নিরাময়ে নিমপাতা খুবই কার্যকরি। নিমপাতার রস প্রাকৃতিক শ্যাম্পু। এটি খুশকি দূর করতে বেশ কার্যকরি। নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি মাথায় আলতো করে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন, খুশকি দূর হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন এটি করতে পারেন। এছাড়া মধুর সঙ্গে নিমপাতার রস মিশিয়ে মাথায় চুলের গোড়ায় লাগান। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুল নরম ও কোমল হবে। এটি সপ্তাহে দুদিন করুন।

সংক্রমণ রোধ করে : নিমপাতার রস সব ধরণের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। সর্দি, কাশি ও জ্বর নিরাময়ে নিম খুবই কার্যকরি।

উকুন বিনাশ করে : উকুনের সমস্যায় বহু নারী ভুগে থাকেন। এটি থেকে মুক্তি পেতে নিমপাতা সেদ্ধ করে নিন। এরপর সেই পানি ঠাণ্ডা করে মাথায় লাগান। সপ্তাতে ২/৩ বার এটি করুন। উকুন দূর হবে।

হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক রাখে : রক্তচলাচল বৃদ্ধি করে নিম আমাদের হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বেশ কার্যকরি।

জন্ডিস নিরাময় : জন্ডিসে আক্রান্ত হলে প্রতিদিন সকালে নিমপাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন। ২৫/৩০ ফোটা নিমপাতার রস নিবেন। জন্ডিস দূর হবে।

ঠাণ্ডাজনিত বুকের ব্যথা : ঠাণ্ডাজনিত কারণে বুকে জমে থাকা কফ ও ব্যথা দূর করতে নিমপাতার রস ৩০/৪০ ফোটা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।

অ্যালার্জি নিরাময় : যারা অ্যালার্জি নিয়ে ভুগছেন, তারা নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করুন। অ্যালার্জি নিরাময় হবে। এছাকা কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা বেটে শরীরের লাগাতে পারেন।

ম্যালেরিয়া নিরাময় : নিমে রয়েছে গ্যাডোনিন। যা ম্যালেরিয়া রোধে কার্যকরি।

পোকা-মাকড়ের কামড় : পোকা মাকড়ে কামড় দিলে বা হুল ফোঁটালে নিমের মূলের ছাল অথবা পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগান। উপকার পাবেন।

বাত ব্যথা উপশম : নিমপাতা, নিমের বীজ ও বাকল বাতের ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরি একটি ওষুধ। বাতের ব্যথা নিরাময়ে নিমের তেল ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়।

ব্রণ দূর করে : নিমপাতা গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত করতে হবে। তাহলে আপনার মুখের ব্রণ দূর হবে।

রুচিবর্ধক : পেটের অসুখ ও অজীর্ণ ভাব দূর করতে নিমপাতা খুবই উপকারি। নিমপাতার রস দু-একবার খেলেই মুখে রুচি ফিরে আসে।

ক্ষত নিরাময় : নিমপাতায় রয়েছে অ্যান্টিমাক্রোবাইলাল উপাদান। যা ক্ষত নিরাময়ে খুবই কার্যকরি। ক্ষতস্থানে নিমপাতা বেটে লাগিয়ে দিন, দ্রুত উপকার পাবেন।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, মেডিকেল নিউজ টুডে ডট কম ও হেলথলাইন

 

এবি/এসএন

১৮ আগস্ট ২০২১, ০৭:৫৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।