মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রনে খাদ্যাভ্যাস
মাইগ্রেন-এক ধরনের মাথাব্যথা। বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। তবে মাইগ্রেন হলো এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। এই ব্যথা মাথার যে কোনো একপাশ থেকে শুরু হয়। আস্তে আস্তে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা। সব সময় এক অজানা আতংকে থাকতে হয়-কখন ব্যথা উঠে যায়। নারী-পুরুষ সবারই মাইগ্রেন হতে পারে। তবে নারীদের বেশি হয়ে থাকে।
মাইগ্রেন কী?
মাইগ্রেন একটি জিনগত রোগ। পরিবারের কারও থাকলে, এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মস্তিষ্কের ট্রাইজেমিনাল নার্ভ উত্তেজিত হলে এই ব্যথা শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কের সেরেটোনিন নামক কেমিকেলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ায় মাইগ্রেনের ব্যথা হয়ে থাকে। মাইগ্রেনের রোগীদের সংবেদনশীলতা অনেক বেশি। অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা, দুর্গন্ধ, দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকা, অতিরিক্ত আলো বা রোদ, আগুন, শব্দ; এসব তাদের ব্যথার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত কপালের এক পাশে হয়ে থাকে। আর এই ব্যথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে বমিভাব কিংবা বমি, আলো বা শব্দে খারাপ লাগা। ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাথা থাকতে পারে।
চিকিৎসা
মাইগ্রেন ব্যথার কোনো অনুমোদিত মেডিকেল চিকিৎসা নেই। বিভিন্ন ধরনের পেইন কিলার ব্যবহার করা হয়। তবে এ সকল পেইন কিলার দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পেটে আলসার, উচ্চরক্তচাপ ও কিডনি সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চিকিৎসক পরামর্শ ছাড়া এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার মোটেই ভালো সিদ্ধান্ত নয়।
তবে মাইগ্রেনের সাথে খাদ্যাভ্যাসেরও সম্পর্ক রয়েছে। কিছু খাবার আছে, যা খেলে মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বাঁধাকপি : বাঁধাকপির ম্যাগনেশিয়াম, ওমেগা-৩ ও ফাইবার মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়। এছাড়া রয়েছে গাজর ও মিষ্টি আলু। গাজর ও মিষ্টি আলুতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। আরও রয়েছে ভিটামিন-সি, বি২, বি৬, নিয়াসিন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস, যা ব্যাথা ও প্রদাহ দূর করে।
মাশরুম : মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আরেকটি বিশেষ খাবার হচ্ছে মাশরুম। মাশরুমে ম্যাগনেশিয়াম ও রিবোফ্লোবিন থাকায় মাইগ্রেনের স্থিতি ও পুনরাবৃত্তি রোধ করে।
চেরি : চেরি স্ট্রেস দূর করে, মাথা ব্যথা কমায়। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনলস নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
ওটস : রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ওটস। বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
পানি : শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পানিতেই আছে। তাই দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।
হার্বাল চা : মাথা ব্যথার সময় অনেকেই চা খেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে হারবাল চা খুবই উপকারী। আদা কুঁচি ও লেবু দিয়ে চা খেলে ব্যথার পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়।
গোলমরিচ : এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ মাইগ্রেন থেকে রক্ষা করে। এক কাপ গরম পানিতে গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। সঙ্গে মধু আর লেবুও মিশিয়ে নিতে পারেন।
তবে কিছু কিছু খাবার রয়েছে, যা গ্রহণের পর মাইগ্রেনের ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় বা হালকা ব্যথার ভাব থাকলে তা পরিপূর্ণ মাইগ্রেনের ব্যথায় রূপ লাভ করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : চকোলেট, পনির, মদ্যপান।
মাইগ্রেনের রোগীর নিজের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারণের পদ্ধতিতে বদল এনে ব্যথাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
টাইমস/এসজে