কচুর লতি : খেলেই লাভ, নেই ক্ষতি
প্রতিকী ছবি
এখন বর্ষাকাল। গ্রীষ্মকালীন সবজিতে বাজার ভরপুর। কচু, কচুর লতি, কলমি শাক, পেঁপে, ঝিঁঙে, চিচিঙ্গা, করোলাসহ নানা ধরণের সবজি এখন সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। বছরের এই সময়ে বাজারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় কচু, কচুরমুখি, কচুর লতি ইত্যাদি।
পুষ্টিগুণে ভরপুর কচু ও কচুর লতি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। এতে রয়েছে নানা ধরণের উপকারি ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। কচুর লতি আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। এটি এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করা হয়।
‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য এই পর্বে কচুর লতির পুষ্টিগুণ নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-
পরিচয়
বিভিন্ন দেশে কচু ও কচুর লতি পাওয়া যায়। বিশেষ করে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে কচুর লতি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কচুর লতি মূলত কচুর শিকড় থেকে বের হওয়া এক ধরণের শ্বাসমূল। এটি নরম ও পুষ্টিকর।
পুষ্টিগুণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কচুতে যে উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ রয়েছে, কচুর লতিতেও একই পুষ্টিগুণ রয়েছে। এমনকি কচুর লতি বেশি উপকারি বলে অনেক গবেষক মত দিয়েছেন।
কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, আঁশ, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ফোলেট, থায়ামিন এবং আয়োডিন।
উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও আয়োডিন, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বুস্ট করে। গর্ভবতী, খেলোয়াড ও বাড়ন্ত শিশুদের কচুর লতি খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। কারণ এই সবজি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরি।
হজমশক্তি বাড়ায় : কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর খাদ্য আঁশ। এই উপাদানটি আমাদের পরিপাকযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খাবার হজম করার জন্য আঁশ খুবই কার্যকরি একটি উপাদান।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : আমাশয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রয়োজন ভালো মতো খাবার হজম হওয়া। অনেকের হজমশক্তি দুর্বল, যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকেন বছরের পর বছর। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত পরিমিত আকারে কচুর লতি খান, তবে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
সংক্রমণ রোধ করে : কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা শরীরে সাধারণ জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো সংক্রমণ রোধ করে।
চর্মরোগ নিরাময় : কচুর লতির অন্যতম কার্যকারিতা হলো, চর্মরোগ নিরাময় করা। যারা চুলকানি বা অন্যান্য চর্মরোগে ভুগছেন, তারা কচুর লতি খেতে পারেন, ভালো ফল পাবেন আশা করি।
রক্তে কোলেস্টেরল কমায় : বয়স বৃদ্ধি ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর একটি ব্যাপার। কিন্তু আপনি কি জানেন, কচুর লতি খেলে আপনার শরীরের রক্তে জমে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ভেঙে যায়। পরে ওই কোলেস্টেরল শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
মুখের ঘাঁ দূর করে : কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি। এই ভিটামিনের অভাবের অনেকের মুখে ঘাঁ হয়। আপনি মুখের ঘাঁ দূর করতে চাইলে কচুর লতি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
হাঁড় ও মাড়ি মজবুত করে : এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর আয়োডিন ও আয়রন। এই দুই খনিজ উপাদান মানব দেহের হাঁড় ও মাড়ি গঠনে খুবই কার্যকরি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা কচুর লতি খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। এতে কোনো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ও সুগার নেই। বরং এটি রক্তে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে, ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : কচুর লতি কোলন ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকরি। কারণ কচুর লতি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়া এটি নিয়মিত খেলে রক্তে জমে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের হয়ে যায়। ফলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে যায়।
পরামর্শ
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট। যে কারণে রান্না করার পরও কচু বা কচুর লতি খেলে অনেকের গলা চুলকায়। তাই গলা চুলকানো থেকে রেহায় পেতে খাওয়ার সময় একটু লেবু মিশিয়ে নিন। এছাড়া যারা অ্যালার্জিতে ভুগছেন, তারা কচুর লতি খাওয়া পরিহার করুন। কারণ এটি আপনার অ্যালার্জি বাড়িয়ে দিতে বেশ পটু।
সূত্র : সেতারাফার্ম ডট কম ও উইকিপিডিয়া
এবি/এসএন