নানা রোগের নিরাময়ে অনন্য ‘শালুক’
প্রতিকী ছবি
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। শাপলা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। শাপলার মতোই পুষ্টিগুণে ভরা একটি জলজ উদ্ভিদ ‘শালুক’। এটি বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটি ফল। গ্রামে কিংবা শহরে, সবখানেই ভরা মৌসুমে এই বাজারে পাওয়া যায়। জলাভূমিতে জন্মানো শাপলার গোড়ায় এই ফল পাওয়া যায়।
প্রিয় পাঠক, এই পর্বে শালুকের গুণাগুণ ও পুষ্টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, কি আছে শালুকে-
পরিচয়
শালুকের বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea nouchalli। এটি মূলত Nymphaeaceae পরিবারভুক্ত একটি জলজ উদ্ভিদ। এটি এক বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, জাপান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফিলিপাইন ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে শালুক পাওয়া যায়। অনেক দেশে এটির বাণিজ্যিক চাষও শুরু হয়েছে। এটি মূলত শাপলা ফল।
প্রতিবছর বর্ষাকালের শেষে দেশের জলাভূমিগুলোতে এই ফল পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। এই ফলের খোসা পুরু ও নরম। ভিতরে ছোট ছোট কালোজিরা সদৃশ দানা পাওয়া যায়। এই ফলটি রসালো।
পুষ্টিগুণ
হেলথ লাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস, জি নিউজ ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, শালুকে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, কপার, পটাসিয়াম, প্রোটিন, আঁশ, ম্যাঙ্গানিজসহ নানার খনিজ উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম শালুকে রয়েছে-
কার্বোহাইড্রেট- ৯০ শতাংশ,
শর্করা- ৬০ শতাংশ,
ক্যালরি- ৬৫ কিলোক্যালরি,
জলীয় অংশ- ৮৪.৯ গ্রাম,
খনিজ পদার্থ- ০.৯ গ্রাম,
খাদ্য আঁশ- ১.৬ গ্রাম,
প্রোটিন- ২.৫ গ্রাম,
চর্বি- ০.৯ গ্রাম,
শর্করা- ১১.৭ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ১০ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ০.৮ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি- ১০.১৮ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি- ২০.০৫ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন সি- ১৫ মিলিগ্রাম।
ঔষধি গুণাগুণ
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস, জি নিউজ ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, শুধু পুষ্টিগুণেই সেরা নয়, বরং শালুক ঔষধি গুণেও অনন্য। শালুক অ্যালার্জি ও হাত পা ফোলা রোগ নিরাময় করে। বিশেষ করে ঋতুবর্তী নারীদের শারীরিক জটিলতা নিরসনে এই ফল খুবই কার্যকরী।
উপকারিতা
জি নিউজ, ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, শালুক-
ঋতুস্রাবজনিত রোগ সারায়: ঋতুস্রাবজনিত মহিলাদের নানা ধরণের রোগ নিরাময়ে এই ফলটি দারুণ কার্যকরী। ভেষজ এই উপাদানটি জরায়ুর পেশী এবং এন্ডোমেট্রিয়ামের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। ফলে জরায়ু মুখের ঘা এবং পেটের যন্ত্রণা কমায়।
অ্যালার্জি নিরাময় করে: শালুক শুকিয়ে গুঁড়ো করে খেলে অ্যালার্জি ও হাত পা ফোলা রোগ কমে যায়।
ডায়রিয়া নিরাময় করে: উদরাময় ও তলপেটে ব্যথায় শালুকের জুড়ি মেলা ভার। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান পেট ব্যথা নিরাময়ে দ্রুত কাজ করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: এতে রয়েছে পটাসিয়াম ও ভিটামিন সি, যা উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সহায়তা করে।
দেহ বিষমুক্ত করে: অনেকের শরীর সবসময় গরম হয়ে থাকে। কিন্তু আপনারা যদি শালুক খান, তাহলে শরীর ঠাণ্ডা থাকবে। এছাড়া এটি দেহ থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়।
শক্তি জোগায়: শালুকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালরি, যা দেহের শক্তি সঞ্চার করে।
ক্যান্সার দূরে রাখে: এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। এসব উপাদান ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে।
হজমশক্তি বাড়ায়: বমিভাব ও হজমের সমস্যা দূর করতে শালুকের জুড়ি মেলা ভার। কারণ পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশে ভরপুর এই শালুক ফল।
ঘুম ভালো করে: যারা অনিদ্রা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগে থাকেন, তারা নিয়মিত কয়েকদিন শালুক খেতে পারেন। এটি দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর করে শালুক।
রক্তশূন্যতা দূর করে: রক্তশূন্যতা দূর করতে শালুক বেশ কার্যকরী। এছাড়া ব্রঙ্কাইটিস নিরাময়েও এই ফল খাওয়া যেতে পারে।
ত্বক উজ্জ্বল করে: ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ রাখতেও শালুক অনন্য ভূমিকা রাখে। এই ফলটি পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন বি ও ভিটামিন ই-তে ভরপুর। আর এসব উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যাপক কার্যকরী।
তথ্যসূত্র- জি নিউজ, বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও উইকিপিডিয়া।