• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুষ্টিগুণে মধুর চেয়েও মধুর ‘পানি কচু’

পুষ্টিগুণে মধুর চেয়েও মধুর ‘পানি কচু’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

পানি কচু। দারুণ এক সবজি। সুস্বাস্থ্য ও জটিল রোগ প্রতিরোধের প্রাকৃতিক প্রতিষেধক। গবেষকরা বলছেন, পানি কচু বেশ কয়েকটি জটিল রোগের নিরাময়ে কার্যকরী। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের নিম্ন জলাভূমি ও প্লাবনভূমিতে, জলাধারের পাশে পানি কচু জন্মে। বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও এই কচুর আবাদ হচ্ছে। পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনে ভরপুর পানি কচু সম্পর্কে আমাদের আজকের এই তথ্য বিতরণ।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক পানি কচুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-

পরিচয়

পানি কচুর বৈজ্ঞানিক নাম Colocasia esculentum। খাদ্য হিসেবে এই কচু আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। শহর কিংবা গ্রাম, সব এলাকাতেই এই কচু পাওয়া যায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়ায় এই কচু ভালো জন্মে। তবে স্যাঁতসেঁতে প্লাবন ভূমিতে এই কচুর বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে এই কচুর আঞ্চলিক একাধিক নাম রয়েছে। যেমন- সোলা কুচ, জলকচু, পানিমুখি কচু ইত্যাদি।

যেভাবে খেতে পারেন পানি কচু

পৃথিবীতে প্রচলিত ও খাবার যোগ্য ৮৭ প্রজাতির কচু রয়েছে। এসব কচুর পুষ্টিগুণ ও কার্যকারিতা প্রায় একই। কচুতে অক্সালিক নামক উপাদান থাকে, যা গলা চুলকানোর মতো সমস্যা তৈরি করে। কাজেই কচু রান্নার সময় লেবু বা সিরকা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টি গবেষকরা। পাশাপাশি পানি কচু রান্নার ক্ষেত্রে রান্নার আগে ভালো মতো ধুয়ে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য কচুর চেয়ে পানি কচুতে গলা চুলকানোর ঝুঁকি অনেক কম।

পুষ্টি উপাদান

জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইন, ওয়েব এমডি ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, পানি কচুতে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, আয়রনসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান। এ ছাড়া এতে রয়েছে শ্বেতসার এবং এমাইলোপেকটিনের মতো উপাদান। এতে বিশেষ করে রয়েছে, অক্সিলেটিক এসিড, ক্যালসিয়াম অক্সালেট এবং স্যাপোটকসিন।

প্রতি ১০০ গ্রাম পানি কচুতে রয়েছে-

ক্যালরি- ১০১ কিলোক্যালরি
জলীয় অংশ- ৭১.৯ গ্রাম,
প্রোটিন- ২.২ গ্রাম,
ফ্যাট- ০.২ গ্রাম,
শর্করা- ২০.৬ গ্রাম,
ফাইবার- ৪.১ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৪০ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ০.৯ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম- ৩৩ মিলিগ্রাম,
পটাসিয়াম- ৫৯১ মিলিগ্রাম,
সোডিয়াম- ৯ মিলিগ্রাম,
জিঙ্ক- ০.২৩ মিলিগ্রাম,
কপার- ০.১৭ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন ই- ২.৩৮ মিলিগ্রাম,
ফোলেট- ২২ এমসিজি এবং
ভিটামিন সি- ৬.২ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা

হেলথ লাইন, ওয়েব এমডি, রিসার্চ গেইট ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, পানি কচু-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা পানি কচু খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। এতে রয়েছে কম মাত্রার কার্বোহাইড্রেট। সুগারের মাত্রাও একেবারে কম। কাজেই এই কচু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দারুণ একটি খাবার।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: নিয়মিত পানি কচু খাওয়ার ফলে কোলন ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। যা গবেষণায় প্রমাণিত।

আয়রনের ঘাটতি পুরণ করে: পানি কচুতে রয়েছে পর্যাপ্ত আয়রন। ফলে নিয়মিত এই কচু বা এর শাক খেলে আয়রনের ঘাটতি পুরণ হয়।

রক্ত শূন্যতা দূর করে: পানি কচুতে থাকা পর্যাপ্ত আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম রক্ত শূন্যতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যাদের রক্ত শূন্যতা আছে তারা নিয়মিত এই কচু খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

হজমশক্তি বাড়ায়: পানি কচুতে রয়েছে ফাইবার বা খাদ্যআঁশ। এ ছাড়া এতে রয়েছে আয়রন, জিঙ্ক ও ভিটামিনস। এসব উপাদান দেহের মেটাবলিজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: পানি কচু খেলে রক্তের কোলেস্টরল কমে। তাই উচ্চরক্ত নিয়ন্ত্রণে এই কচু খেতে পারেন।

গর্ভবতীদের জন্য উপকারি: পানি কচু গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারি। এটি দামেও সস্তা। এতে থাকা ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, জিঙ্ক, পটাসিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিন গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই উপকারি।

জ্বর সারায়: গবেষকরা বলছেন, তে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, ফোলেট ও থায়ামিন। যা জ্বর সারাতে ব্যাপক ভাবে কার্যকরী। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

সতর্কতা

পানি কচুসহ অন্যান্য প্রায় সব জাতের কচুতে রয়েছে অক্সলেট নামক উপাদান। আর এই উপাদানের কারণে অনেকেরই গলা চুলকায়। তা কচু রান্নার সময় লেবুর রস বা ভিনেগার ব্যবহার করলে গলা চুলকানোর সমস্যা থেকে রেহায় পাওয়া যায়। পাশাপাশি যারা এলার্জি, অ্যাজমা অথবা চর্মরোগে ভুগছেন, তারা এই কচু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, ওয়েব এমডি ও উইপিকিডিয়া।

২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৪:১৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।