• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য গুণে ভরা গাছ ‘অশোক’

অনন্য গুণে ভরা গাছ ‘অশোক’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

অশোক গাছ অতি পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। অশোক গাছের গুণাগুণ অনেক। এই গাছের বাকল, ফুল, বীজ ও শিকড় দারুণ উপকারী। তবে সবচেয়ে বেশি উপকারি অশোক গাছের ছাল। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ব্যথা উপশমসহ নানান রোগের নিরাময়ে অশোক গাছের জুড়ি মেলা ভার।

তবে এই গাছের ঔষধি ব্যবহারের পাশাপাশি রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কাজেই এটি ব্যবহারে সতর্কতাও জরুরি। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে অশোক গাছে-

পরিচয়

আশোক গাছ চীন, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বেশি পাওয়া যায়। তবে এটি বাংলাদেশেও এখন পাওয়া যায়। এই গাছটি বহু শাখাবিশিষ্ট। এর বৈজ্ঞানিক নাম Saraca asoca। এটি মূলত Fabaceae পরিবারভুক্ত প্রজাতির উদ্ভিদ। এটির ইংরেজি নাম Yellow Ashok, Yellow Saraca।

গবেষকরা বলছেন, নেপাল, ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় অশোক গাছকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। বৌদ্ধ এবং হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে এই গাছের সংযোগ রয়েছে। প্রাচীন হিন্দু পুরাণ, কলা, ভাস্কর্য এমনকী রামায়ণেও অশোক গাছের উল্লেখ আছে।

কি আছে অশোক গাছে

ওয়েব জার্নাল ইন্ডিগো হার্বস ও হেলথ বেনিফিট টাইমসে বলা হয়েছে, অশোক গাছের পাতা ও বাকলে রয়েছে ট্যানিন, ক্যাটেকোহল, স্টেরল এবং বিবিধ ধরনের ক্যালসিয়াম যৌগ। এ ছাড়া এই গাছের শিকড়ে রয়েছে কপার, জিঙ্ক, আয়রন, ফসফরাস, কোবাল্টসহ নানা ধরণের খনিজ উপাদান। এই গাছের বাকল বা ছালে রয়েছে কোলেস্টেরল।

অশোক গাছের উপকারিতা

জনপ্রিয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক ওয়েব জার্নাল ইন্ডিগো হার্বস, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, অশোক গাছের ছাল, পাতা ও শিকড়-

স্ত্রীরোগ সারায়: মহিলাদের ঋতুস্রাবজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য যুগ যুগ এই গাছের ব্যবহার চলে আসছে। ভেষজ এই উপাদানটি জরায়ুর পেশী এবং এন্ডোমেট্রিয়ামের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। ফলে জরায়ু মুখের ঘা এবং পেটের যন্ত্রণা কমায়।

এই উপাদানটি অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ডিসমেনোরিয়া, লিউকোরিয়া, ফাব্রয়েডস, সিস্ট এবং অন্যান্য স্ত্রীরোগের নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকরী।

ত্বক উন্নত করে: ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অশোক গাছের জুড়ি মেলা ভার। এটি রক্ত পরিশোধন করে। পাশাপাশি এটি ত্বকের অ্যালার্জি প্রতিরোধেও সহায়তা করে। অশোকের পাতা ছালের রস ত্বক থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে ত্বক পরিষ্কার রাখে।

ব্যথা নিরাময় করে: এই গাছের মধ্যে ব্যথা উপশমকারী উপাদান রয়েছে বলে গবেষণায় প্রমাণিত। গবেষকরা বলছেন, নিরাপদ বেদনানাশক হিসেবে অশোক গাছের ছাল ও পাতার রস ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি জয়েন্টের ব্যথা এবং দীর্ঘদিনের মাসলের ব্যথা দূর করতে কার্যকরী।

রক্তক্ষরণ রোধ করে: ভেষজ এই উপাদানটি দেহের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ রোধে খুবই কার্যকরী। অশোক ফুল পিষে সেই রস পানিতে মিশিয়ে খেলে রক্তক্ষরণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: অশোক গাছের শুকনো ফুল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। নিয়মিত এই টনিক ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।

পাইলস নিরাময় করে: যারা পাইলসে ভুগছেন, তারা শুকনো অশোক গাছের ছাল গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি রক্ত পাইলস নিরাময়ে ব্যাপকভাবে কার্যকরী।

ইনফেকশন দূর করে: ফাঙ্গাল এবং ব্যক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য অশোকের ছালের বিকল্প পাওয়া দুষ্কর। এই ছালের রস শরীরের সুস্থতা ও ইনফেকশন দূরে রাখে।

কৃমিনাশক: গবেষকরা বলছেন, এটি খুব ভালো কৃমিনাশক উপাদান। অশোক গাছের পাতা, ছাল সেবন করলে পেটের কৃমি পরিষ্কার হয়।

কিডনির পাথর দূর করে: অশোক গাছের বীজ কিডনিতে জমে থাকা পাথর নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। যা পরীক্ষিত। পানির সঙ্গে অশোক গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে কিডনির পাথর দূর হয়।

কিভাবে ব্যবহার করবেন অশোক

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, চামড়া কসখসে হয়ে গেলে অশোক বীজ বেটে হলুদের মতো করে ত্বকে লাগিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। ঘণ্টাখানিক রাখার পর গোসল করে নিতে হবে।

শরীরে জ্বালাপোড়া ভাব দূর করতে অশোক গাছের ছাল ২০ থেকে ২৫ গ্রাম সামান্য পানিতে সেদ্ধ করে ওই পানি ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। পরে ওই পানি শরীরে লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।

বিষাক্ত পোকামাকড়ে কামড়ালে জ্বালা-যন্ত্রণা হতে পারে, এ থেকে মুক্তি পেতে অশোকের ছাল ব্যবহার করা যেতে পারে।

সাবধানতা

অশোক গাছের উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি এর কিছু ঝুঁকিপূর্ণ দিকও রয়েছে। বিশেষ করে যাদের অ্যামিনোরিয়া বা অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে।

এছাড়া এটি সরাসরি ব্যবহার করলে পেটে ব্যথা এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। এই গাছের কোনো উপাদানই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়। তাই গর্ভাবস্থায় অশোক গাছের ছাল, ফুল, পাতা ও শিকড় সেবন থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র- ইন্ডিগো হার্বস, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও উইকিপিডিয়া।

২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৬:২২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।