‘টক-মিষ্টি কদবেল, পুষ্টিগুণে সবাই ফেল’
প্রতিকী ছবি
কদবেলের নাম শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। টক-মিষ্টি স্বাদের ফলটি এখন সারা দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে টক স্বাদের কদবেল বেশি পাওয়া যায়। ঝাল, মিষ্টি মশলা মেখে কদবেল খাওয়ার মজাই আলাদা। ভিটামিন সি-তে ভরপুর ফলটি পুষ্টিগুণেও সেরা। এতে রয়েছে নানা খনিজ উপাদান। যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই প্রয়োজনীয়।
‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য এই পর্বে কদবেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। চলুন এক নজরে দেখে নিই-
পরিচয়
কৎবেল বা 'কদবেল' একটি দেশিয় ফল। আগস্ট-নভেম্বর মাসে এই ফল পাকা শুরু করে। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ‘কপিত্থ’। পাকা কতবেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ও সি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Feronia Limonia Swingle। কদবেলের ইংরেজি নাম Elephant Apple ও Monkey fruit।
পুষ্টিগুণ
কদবেলে আছে নানা ধরণের পুষ্টিগুণ। এতে যে খাদ্যশক্তি রয়েছে তা প্রায় কাঁঠাল ও পেয়ারার সমান। এতে আমের চেয়ে আমিষ রয়েছে তিনগুণ বেশি। কাঁঠাল, লিচুর চেয়ে এতে আমিষ রয়েছে দ্বিগুন। আমলকী ও আনারসের চেয়েও কদবেলে আমিষের পরিমাণ চারগুণ বেশি।
প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলে রয়েছে
পুষ্টিমান পানীয় অংশ ৮৫.৬ গ্রাম
খনিজপদার্থ ২.২ গ্রাম
খাদ্যশক্তি ৪৯ কিলোক্যালোরি
আমিষ ৩.৫ গ্রাম
চর্বি ০.১ গ্রাম
শর্করা ৮.৬ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৫.৯ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি ০.৮০ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন সি ১৩ মিলিগ্রাম।
উপকারিতা
ত্বকের সুরক্ষা : ব্রণ, মেছতা ও ত্বকের অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকতে কদবেলের জুড়ি মেলা ভার। কাঁচা কদবেল মুখে মাখলে ব্রণ ও মেছতা দূর হয়।
শ্বাসযন্ত্র ভালো রাখে : কদবেলের পাতার নির্যাস শ্বাসযন্ত্র ভালো রাখতে খুবই কার্যকরি।
পেটের ব্যথা দূর করে : দুধ ও চিনির সঙ্গে কদবেলের পাতা মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুসহ প্রাপ্তবয়স্কদের পেটের ব্যথা দূর হয়। এটি পরীক্ষিত ভেষজ চিকিৎসা হিসেবে প্রচলিত রয়েছে।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় নিরাময় : যারা দীর্ঘ মেয়াদে আমাশয় ও কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তারা নিয়মিত কয়েকদিন কদবেলের ফুল শুকিয়ে গুঁড়া করে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। অবশ্যই উপকার পাবেন। আপনারা চাইলে এই গুঁড়া সারা বছর সংরক্ষণ করতে পারেন।
হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা : এই ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও আয়রন। যা রক্ত পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। ফলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে হৃদযন্ত্র সুরক্ষিত থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তারা কদবেল খেতে পারেন ওষুধ হিসেবে। কারণ এতে থাকা ভিটামিন সি রক্তের চাপ নিম্নমুখী করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।
শক্তিবর্ধক ফল : কদবেলের গুঁড়া মিসরি গুলানো পানিতে মিশিয়ে পান করলে শরীরের শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম।
নারীদেহের হরমোন বৃদ্ধি করে : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদেহের হরমোন কমতে থাকে। ফলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কদবেল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ কদবেল নারীদেহের হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : নারীদের স্তন ও জরায় মুখে ক্যান্সার নিরাময়ে কদবেল অত্যন্ত কার্যকরি একটি ফল। এতে থাকা খনিজ উপাদান নারীদেহের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারি।
পরামর্শ
যারা কিডনী ও নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন, তারা কদবেল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এতের রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। তথ্যসূত্র- হেলথলাইন ডটকম, হেলথবেনেফিট টাইমস ডটকম ও উইকিপিডিয়া।
এবি/এসএন