• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ‘মুখী কচু’

ক্যান্সার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ‘মুখী কচু’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

রসনাবিলাসী বাঙালির অন্যতম প্রিয় একটি খাবার কচু। বাংলাদেশে নানা ধরনের কচু পাওয়া যায়। এর মধ্যে মানকচু, কচুর লতি, সোলা কচু, মুখী কচু, ওল কচু অন্যতম। গরম ভাতে মুখী কচুর ভর্তা যেমন অমৃত। এ ছাড়া ইলিশ কিংবা রুই মাছের সঙ্গে মুখী কচুর ঝোল তরকারির স্বাদ যেন অসাধারণ। মুখী কচু স্বাদে যেমন অনবদ্য, পুষ্টিমানেও তেমন অনন্য।

প্রিয় পাঠক চলুন, দেখে নেয়া যাক কি আছে মুখী কচুতে-

পরিচয়

মুখী কচু আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। এটি শীতকালে বেশি পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Colocasia esculenta। যা মূলত Colocasia esculenta পরিবারভুক্ত একটি সবজি। এর ইংরেজি নাম Eddo বা Taro। এটি আলুর উত্তম একটি বিকল্প। পতিত জমি বা বাড়ির আশে পাশে এই কচু চাষ করা যায়।

পুষ্টিগুণ

জনপ্রিয় ওয়েবজার্নাল ওয়েব এমডি, হেলথ লাইন ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, মুখী কচুতে রয়েছে ক্যালরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ফসফরাস, সোডিয়াম, কপারসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম মুখী কুচতে রয়েছে-

ক্যালরি- ১০৩ কিলোক্যালোরি,
জলীয় অংশ- ৭১.১ গ্রাম,
প্রোটিন- ২.২ গ্রাম,
ফ্যাট- ০.২ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ২১.০ গ্রাম,
ফাইবার- ৪.১ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৩৫ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ০.৭ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম- ৩৩ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ৮৪ মিলিগ্রাম,
পটাসিয়াম- ৫৯১ মিলিগ্রাম,
সোডিয়াম- ১১ মিলিগ্রাম,
জিঙ্ক- ০.২৩ মিলিগ্রাম,
কপার- ০.১৭ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন এ- ৪ এমসিজি,
বিটা কেরোটিন- ৪৫ এমসিজি,
ভিটামিন ই- ২.৩৮ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন সি ৬.১ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা

জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইন, ওয়েব এমডি, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, মুখী কচু-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: এই কচু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা খনিজ উপাদান ও ভিটামিনস ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: গবেষণা বলছে, মুখী কচুতে থাকা রাসায়নিক ও খনিজ উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া এতে রয়েছে এল-আর্গিনাইন যৌগ। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

ওজন কমায়: নিয়মিত মুখী কচু খেলে ওজন কমে। এতে অ্যান্টি-ওবেসিটি প্রভাব রয়েছে। এছাড়া ওলে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান ও খাদ্যআঁশ। যা স্থুলতা কমায় এবং দেহের বাড়তি মেদ ঝরাতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এই কচুতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি দেহে প্রদাহ কমায়। ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

মস্তিষ্ক স্বাভাবিক রাখে: মুখী কচুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি-৬। এই উপাদানটি খিটখিটে মেজাজ এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।

রক্তশূন্যতা দূর করে: এই কচুতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, জিঙ্ক ও ফোলেট, যা রক্তশূন্যতা দূর করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য মুখী কচুর জুড়ি মেলা ভার। এতে থাকা খাদ্যআঁশ হজমক্রিয়া উন্নত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, মল নরম হয়। এটি দেহের মেটাবলিজম উন্নত করে।

ত্বক ও চুল ভালো রাখে: এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি (নিয়াসিন)। এসব উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী। এছাড়া কচুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি৬, যা চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করে।

সতর্কতা

মুখী কচুতে রয়েছে অক্সালিক এসিড। ফলে কচু রান্নার সময় সামান্য ভিনেগার বা লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। অন্যথায় গলা চুলকানোর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা কচু খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া উচিত। গর্ভবতী নারীদের জন্য মুখী কচু বেশি পরিমাণে না খাওয়ায় ভালো। কারণ এটি বেশি পরিমাণে খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

তথ্যসূত্র- হেলথ লাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস, ওয়েব এমডি ও উইকিপিডিয়া।

১৯ এপ্রিল ২০২২, ০৬:২৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।