• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘পুষ্টিগুণে ছোট মাছের বড় ক্ষমতা’

‘পুষ্টিগুণে ছোট মাছের বড় ক্ষমতা’

ফাইল ছবি

ফিচার ডেস্ক

‘সময় এখন বর্ষাকাল, হরিণ খামচায় বাঘের গাল’ দেশের বরেণ্য পপ সঙ্গীত শিল্পী প্রয়াত আজম খানের কণ্ঠে এই গানটি অনেকেই শুনেছেন। এই গানের যে পঙক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে, তাতে বুঝা গেছে, বর্ষাকালে নিরীহ হরিণও বাঘের চেয়ে শক্তিতে এগিয়ে যায়। গানের এই কথার পেছনে কতটা যুক্তি আছে সেই তর্কে আমরা যেতে চাই না।

তবে এটা মেনে নিতেই হবে, ‘সময় এখন বর্ষাকাল, ছোট মাছে বাজার বেসামাল’। ঠিকই ধরেছেন, আমাদের এই পর্বে ‘ছোট মাছের পুষ্টিগুণ’ নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরা হবে। কারণ এখন বর্ষাকাল। বছরের এই সময়ে সারা দেশেই খাল-বিলে পাওয়া দেশীয় জাতের পুঁটি, ট্যাংরা, মলা, ঢেলা, কাচকি, ফলি ইত্যাদি মাছ।

দেশের অধিকাংশ মানুষই ছোট মাছ খেতে পছন্দ করেন। চিকিৎসকরাও বড় মাছের চেয়ে ছোট মাছ খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। এর কারণ কী? অবশ্যই এর কারণ আমাদের জানা উচিত। চলুন আজ ছোট মাছ খাওয়ার কিছু কারণ ও যুক্তি সম্পর্কে জেনে নিই-

ছোট মাছের পুষ্টিগুণ

বিভিন্ন প্রজাতির মাছগুলোকে আমরা একত্রে ‘ছোট মাছ’ হিসেবে চিনে থাকি। এসব পাঁচমিশালি মাছে রয়েছে উপকারি চর্বি, পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, প্রোটিন, লাইসিন ও মিথিওনিন। এসব উপাদান ছোট মাছেই বেশি থাকে। তবে এসব মাছে আয়োডিন থাকে স্বল্প পরিমাণে।

কোন মাছে পুষ্টি কতটুকু

পুঁটি : প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁটি মাছে আছে ১০৬ ক্যালরি শক্তি। এর মধ্যে প্রোটিন ১৮.১ গ্রাম, চর্বি ২.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১০ মিলিগ্রাম।

ট্যাংরা : প্রতি ১০০ গ্রাম দেশি জাতের ট্যাংরা মাছে খাদ্যশক্তি রয়েছে ১৪৪ কিলোক্যালরি। এতে প্রোটিন রয়েছে ১৯.২ গ্রাম, চর্বি ৬.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭০ মিলিগ্রাম ও আয়রন রয়েছে ২ মিলিগ্রাম।

মলা মাছ : এই মাছে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম মলা মাছে ক্যালসিয়াম রয়েছে ৮৫৩ মিলিগ্রাম। এছাড়া আয়রন ৫.৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২০০০ ইউনিট এবং ৩.২ মিলিগ্রাম রয়েছে।

কাচকি মাছ : প্রতি ১০০ গ্রাম কাচকি মাছে প্রোটিন রয়েছে ১২.৭ গ্রাম। এতে চর্বি ৩.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৭৬ মিলিগ্রাম এবং আয়রন রয়েছে ২.৮ মিলিগ্রাম।

ফলি : কাঁটাযুক্ত এই মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন রয়েছে ২০.৩ গ্রাম। এছাড়া ক্যালসিয়াম ১০৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৭ মিলিগ্রাম ও ফসফরাস রয়েছে ৪৫০ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা

রাতকানা রোগ নিরাময় : ছোট মাছের অন্যতম উপকারিতা হলো, এটি রাতকানা রোগ নিরাময়ে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে মলা মাছে থাকে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ক্যালসিয়াম। যা রাতকানা রোগ নিরাময়ে সবচেয়ে কার্যকরি।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে : মলা ঢেলা মাছে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন এ। যা চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরি। নিয়মিত ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস আপনার চোখ বহুদিন সুরক্ষিত রাখবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে : ছোট মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। ফলে এই মাছ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় : ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন। যা হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় খুবই কার্যকরি। হাড় ও দাঁতের যত্নে নিয়মিত ছোট মাছ খেলে আশা করি, আপনাকে হাড় ও দাঁতের জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে না।

গর্ভবতী মায়েদের দুগ্ধ বৃদ্ধিতে : গর্ভবতী মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে ছোট মাছ দারুণ কার্যকরি। গর্ভপরবর্তী মায়েদের নিয়মিত ছোট মাছ খাওয়ালে বুকের দুধ বৃদ্ধি পায়।

পরামর্শ
ছোট অত্যন্ত উপকারি। তবে এতে রয়েছে প্রচুর ফসফরাস, যা কিডনী রোগীদের জন্য হতে পারে ক্ষতির কারণ। এছাড়া যারা ইউরিক অ্যাসিডের জটিলতায় ভুগছেন, তারাও ছোট মাছ থেকে দূরে থাকুন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম, যা আপনার ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি আপনারা পরিমিত আকারে ছোট মাছ খেতে পারেন। তথ্যসূত্র: এআইএস ডট গভ ডট বিডি (ais.gov.bd), বাংলাহেলথ ডটকম ও উইকিপিডিয়া।

 

এবি/এসএন

১২ আগস্ট ২০২১, ০৫:৩৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।