• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্ঠরোগ নিরাময় করে অবহেলিত উদ্ভিদ ‘শিয়ালকাঁটা’

কুষ্ঠরোগ নিরাময় করে অবহেলিত উদ্ভিদ ‘শিয়ালকাঁটা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

গ্রামাঞ্চলের ঝোঁপের ধারে বা মাঠে জমির আইলের পাশে দেখা যায় ‘শিয়ালকাঁটা’। কথিত আছে, এই উদ্ভিদের গন্ধ নাকি শিয়ালের সহ্য হয় না। এই গাছের কাঁটা নাকি শিয়ালের জন্য কষ্টদায়ক। তবে, এসব নিয়ে আমাদের আপাতত না ভাবলেও চলবে। প্রিয় পাঠক, আজ আমরা শিয়ালকাঁটার মতো একটি আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি।

কারণ, শিয়ালকাঁটা অবহেলিত একটি উদ্ভিদ হলেও এর উপকারিতা মোটেও অল্প নয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র ও ভেষজ চিকিৎসাবিদরা বলছেন, বহুকাল আগে থেকে নানা রোগের ভেষজ চিকিৎসায় এই শিয়ালকাঁটা ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি বেশ উপকারী একটি উদ্ভিদ।

তাহলে, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে শিয়ালকাঁটায়-

পরিচয়

শিয়ালকাঁটার বৈজ্ঞানিক নাম Argemone mexicana। এটি স্বর্ণক্ষীরা, স্বর্ণদুগ্ধা, রুক্সিণী, সুবর্ণা, হেমদুগ্ধী, কাঞ্চনী নামেও পরিচিত। শিয়ালকাঁটার ইংরেজি নাম Mexican poppy, Mexican prickly poppy, flowering thistle।

এটি মূলত কাঁটাযুক্ত পপি জাতীয় (প্যাপাভারেসি গোত্রের) গাছ, যা মেক্সিকো থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। বর্তমানে শেয়ালকাঁটা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাচীন গ্রিক ভাষায় আর্জিমা ("ছানি" বা "ক্যাটারাক্ট") থেকে এসেছে। এই গাছের রস চক্ষুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হত বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে আর্জিমোন, এবং মেক্সিকোয় পাওয়া যায় বলে মেক্সিকানা। এটি একাধারে বিষাক্ত আগাছা এবং ওষধি গুল্ম। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে শিয়ালকাঁটা অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে।

ঔষধি গুণ

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, শিয়ালকাঁটা ঔষধি গুণে অনন্য একটি উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ কুষ্ঠরোগ নিরাময়ে ব্যাপকভাবে কার্যকরী। এ ছাড়া সর্দিজ¦র, আমাশয়, বাতব্যথা নিরাময়েও শিয়ালকাঁটার জুড়ি মেলা ভার। এই উদ্ভিদ কৃমি, পিত্ত ও কফনাশক। গনোরিয়া রোগ নিরাময়েও এই উদ্ভিদের শিকড় অত্যন্ত কার্যকরী।

উপাদান

হেলথ বেনিফিট টাইমস, আয়র্বেদ ন্যাচার ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, শিয়ালকাঁটায় রয়েছে অ্যালকালয়েডস। এ ছাড়া এতে রয়েছে অলিক, লিনোলিক ও রিচিনোলিক অ্যাসিড। এছাড়া এতে রয়েছে ফসফরাস, ফাইবার, ভিটামিন সি, আয়রন, মিনারেলস, জিঙ্কসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম শিয়ালকাঁটায় রয়েছে-

ক্যালরি- ১৬ কিলোক্যালোরি,
শর্করা- ৩.৪ গ্রাম,
ফ্যাট- ০.১ গ্রাম,
প্রোটিন- ১.৩ গ্রাম,
ভিটামিন সি- ২১ মিলিগ্রাম,
সোডিয়াম- ৪৫ মিলিগ্রাম,
পটাসিয়াম- ৪৯৪ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৬৫ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ৪৪ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম- ৬৮ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ১.৯৯ মিলিগ্রাম এবং
জিংক- ০.১৭ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা

জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ বেনিফিট টাইমস, আয়র্বেদ ন্যাচার ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, শিয়ালকাঁটা-

সংক্রমণ সারায়: সাধারণ সর্দি জ্বর ও শরীর ব্যথা হলে শিয়ালকাঁটার ডগা সিদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। এটি সর্দি জ¦র ও শরীর ব্যথা নিরাময় হবে।

গণোরিয়া রোগ নিরাময় করে: গণোরিয়া রোগে ভুগছেন, এমন ব্যক্তিদের জন্য শিয়ালকাঁটা যেন আশির্বাদ। এটি নিয়মিত খেলে গণোরিয়া রোগ ভালো হয়। তবে গণোরিয়া রোগের চিকিৎসায় শিয়ালকাঁটা খাওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

পেটের রোগ দূর করে: পেট ফাঁপা, বদহজম ও পেটের ব্যথা উপশমে শিয়ালকাঁটার পাতা সিদ্ধ করে ভর্তা করে খেতে পারেন। এটি পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করবে।

কুষ্ঠরোগ নিরাময় করে: কুষ্ঠরোগ ও অন্যান্য চর্মরোগ নিরাময়ে শিয়ালকাঁটার জুড়ি মেলা ভার। এই উদ্ভিদের শিকড় পিষে রস করে খেলে কুষ্ঠরোগ ভালো হয়।

আমাশয় দূরে রাখে: যারা আমাশয়ে ভুগছেন, তারা নিয়মিত কিছুদিন শিয়ালকাঁটা খেতে পারেন। কারণ এতে থাকা উপাদানগুলো আমাশয় নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী। যা ভেষজ চিকিৎসায় বহুকাল ধরে প্রমাণিত।

বাতের ব্যথা নিরাময় করে: শরীরে বিষ ব্যথা ও বাতের ব্যথা হলে শিয়ালকাঁটার পাতা বেটে রস করে খেলে ব্যথা উপশম হয়।

সতর্কতা

অতিরিক্ত শিয়ালকাঁটা খেলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি বেশি পরিমাণে খাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, শিয়ালকাঁটা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসক বা অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া জরুরি। শিয়ালকাঁটার তেলের মধ্যে অবস্থিত বিষাক্ত উপক্ষারগুলোর মধ্যে দুটি হল স্যাঙ্গুইনারিন ও ডাইহাইড্রোস্যাঙ্গুইনারিন। এই জন্যে এই গাছটি ওষধি গাছ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

তথ্যসূত্র- হেলথ বেনিফিট টাইমস, ন্যাচার আয়ুর্বেদ ও উইকিপিডিয়া।

১৭ এপ্রিল ২০২২, ০৬:১৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।