• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডায়রিয়া বসন্ত রোগ দূরে রাখে ‘আষাঢ়ে লতা’

ডায়রিয়া বসন্ত রোগ দূরে রাখে ‘আষাঢ়ে লতা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ডায়রিয়া, বসন্ত ও কলেরা নিরাময়ের প্রাকৃতিক মহৌষধ আষাঢ়ে লতা। এটি বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পাওয়া যায়। আষাঢ় মাসের সঙ্গে এই আষাঢ়ে লতার দূরতম সম্পর্কও নেই। তবুও অত্যন্ত উপকারি এই উপাদানটির নাম আষাঢ়ে লতা। আবহমান গ্রাম-বাংলায় আগে কলেরা রোগের চিকিৎসায় আষাঢ়ে লতা ব্যবহার করা হতো।

এখন যুগ পাল্টেছে। প্রযুক্তি ও চিকিৎসার ধরণ উন্নত হয়েছে। তারপরও এখনো গ্রামের মানুষ ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, বমি ও সাধারণ রোগ নিরাময়ে প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর ওপর নির্ভর করেন। তেমনই একটি নির্ভরযোগ্য উপাদান ‘আষাঢ়ে লতা’।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে আষাঢ়ে লতায়Ñ

পরিচয়

বাংলাদেশে আষাঢ়ে লতা নানা নামে পরিচিত। এটি আষাঢ়িয়া, আষারিন, কালোকেরা বা কালোকোঁয়া নামেও পরিচিত। আষাঢ়ে লতার বৈজ্ঞানিক নাম Capparis zeylanica। ডায়রিয়া রোগ নিরাময়ে এই উপাদানটি অত্যন্ত কার্যকরী।

এটি মূলত লতাজাতীয় গাছ। বড় গাছের গা জড়িয়ে বেড়ে ওঠে আষাঢ়ে লতা। এটি দেখতে অনেকটা সেমাইয়ের মতো, কিন্তু খুব নরম। তবে এর নাম আষাঢ়ি লতা হলেও আষাঢ় মাসের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

যা আছে আষাঢ়ে লতায়

জনপ্রিয় ওয়েবজার্নাল হেলথ বেনিফিট টাইমস ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, আষাঢ়ে লতায় রয়েছে প্রোটিন, ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম আষাঢ়ে লতায় রয়েছে-

ক্যালরি- ১৩ কিলোক্যালরি,
জলীয় অংশ- ৩৫ মিলিগ্রাম,
কাবোহাইড্রেট- ৬.১ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৯.৫ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ২১.১ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ১.০১ মিলিগ্রাম,
ফাইবার- ২১.৬ মিলিগ্রাম।

ঔষুধি গুণাগুণ

আষাঢ়ে লতা ডায়রিয়া, বাতব্যথা, কলেরা, বসন্ত ও চামড়া ফাটা রোধে বিশেষভাবে উপকারি। এ ছাড়া এটি অন্যান্য ভেষজ চিকিৎসায়ও ব্যাপক কার্যকরী। এই গাছের ফল থেকে তৈরি সিরাপ প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। তবে এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

উপকারিতা

জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ বেনিফিট টাইমস, ন্যাচার আয়ুর্বেদ ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, আষাঢ়ে লতা-

সংক্রমণ রোধ করে: সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশি ও জ্বর নিরাময়ে আষাঢ়ে অত্যন্ত কার্যকরী। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অন্যান্য খনিজ উপাদান সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

ব্যথা দূর করে: যেকোনও ধরণের ব্যথা নিরাময়ে এই উপাদানটির জুড়ি মেলা ভার। এতে রয়েছে ব্যথা উপশমে কার্যকরী ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় উপাদান।

বসন্ত নিরাময় করে: যারা বসন্ত বা গুটি বসন্তে আক্রান্ত হন, তারা এই রোগ থেকে দ্রুত নিরাময়ের জন্য আষাঢ়ে লতা রস করে খেতে পারেন। এতে উপকার পাওয়া যায়।

আমাশয় ও পেটের ব্যথা নিরাময়: যারা দীর্ঘদিন ধরে রক্ত আমাশয়ে ভুগছেন, তাদের জন্য এই লতার রস অত্যন্ত উপকারি। এটি হতে পারে প্রাকৃতিক ঔষধ।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: আষাঢ়ে লতায় রয়েছে প্রচুর অ্যালজিক অ্যাসিড বা অক্সালিড। এই অ্যাসিড খাদ্যনালীর ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।

ডায়রিয়া নিরাময় করে: ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে আষাঢ়ে লতার জুড়ি মেলা ভার। এই লতার রস দ্রুত ডায়রিয়া নিরাময় করে।

বমি থেকে মুক্তি: যাদের কারণে অকারণে বমি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তারা এই লতার রস পরিমিত আকারে সেবন করতে পারেন। এতে বমির প্রবণতা কমবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে আষাঢ়ে লতা খুবই কার্যকরী। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্তরা এই লতার রস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

সতর্কতা

গবেষকরা বলছেন, আষাঢ়ে লতা উপকারি হলেও এটি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

তথ্যসূত্র- হেলথ বেনিফিট টাইমস, ন্যাচার আয়ুর্বেদ ও উইকিপিডিয়া।

১৬ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৪৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।