• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওজন কমায় রোগ সারায় টক ফল ‘বিলিম্বি’

ওজন কমায় রোগ সারায় টক ফল ‘বিলিম্বি’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বিলিম্বি ফল। আমাদের দেশে বেশ পরিচিত একটি টক জাতীয় ফল এটি। স্বাদে টক হলেও এই ফলটি পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতায় বেশ মিষ্ট। বিলিম্বি ফল নানা রোগের হাত থেকে আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে। এই ফলটি দিয়ে আমাদের দেশে মূলত চাটনি, আচার ও টক সস তৈরি করা হয়। কেউ কেউ পাঁচমিশালী মসলাদার ভর্তায় বিলিম্বি ব্যবহার করেন। এটি বেশ জনপ্রিয়।

প্রিয় পাঠক, বিলিম্বির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আমাদের এই পর্বে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে আসি-

পরিচয়

বিলিম্বি অক্সিডেসি গোত্রভুক্ত, যা কামরাঙ্গা জাতীয় ফল। এর স্বাদও অনেকটা কামরাঙ্গার মতোই। শুধু স্বাদই নয় প্রজাতি, বিন্যাস, পরিবার, গুণাগুণ সবকিছুতেই কামরাঙ্গার মতো বিলিম্বি। এই ফলের বাংলা নাম ‘বিলিম্বি’। ইংরেজিতে এটাকে Bilimb বলা হয়। যার বৈজ্ঞানিক নাম Averrhoa bilimbi। দেশে এই ফল বিলিম্বি বা বিলিম্বির গাছ হিসেবে পরিচিত।

এ ফলের আদি নিবাস ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরে। এসব অঞ্চলে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল। বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং ভারতেও এই ফলটি পাওয়া যায়। এটি একটি বিরল উদ্ভিদ। এই ফলের স্বাদ টক। চাটনী ও আচার তৈরিতে বিলিম্বির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।

পুষ্টি উপাদান

উইকিপিডিয়া, হেলথ লাইন ও ন্যাচারাল আয়ুর্বেদ ওয়েব জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিলিম্বিতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, লবণ, আয়রন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাসসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম বিলিম্বিতে রয়েছে-

ক্যালরি- ২৭ কিলোক্যালরি,
জলীয় অংশ- ৯৫ মিলিগ্রাম,
প্রোটিন- ৬.১ গ্রাম,
কাবোহাইড্রেট- ৬.১ মিলিগ্রাম,
লবণ- ৪ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৩.৫ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ১১.১ মিলিগ্রাম,
ক্যারোটিন- ০.০৩৫ মিলিগ্রাম,
অ্যাসকরবিক এসিড- ১৫.৫ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ০.৬-১.০১ মিলিগ্রাম,
নিয়াসিন- ০.৩০২ মিলিগ্রাম,
থায়ামিন- ০.০১ মিলিগ্রাম এবং
ফাইবার- ০.৬ মিলিগ্রাম।

ঔষুধি গুণাগুণ

♦বিলিম্বির পাতা চুলকানি, ফোলা, বাত, মাম্পস বা চামড়া ফাটা রোধে এই ফল বেঁটে পেস্ট করে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

♦বিষধর পোকামাকড়ের কামড় থেকে বাঁচতে ও বিষক্রিয়া নষ্ট করতে এই ফল পিষে রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

♦তাজা বিলিম্বির পাতা যৌন রোগের চিকিৎসায় ব্যাপক ভাবে কার্যকরী।

♦এই ফল থেকে তৈরি সিরাপ প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। তবে এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

♦ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী বিলিম্বি ফল। এটি ভারতের তামিলনাড়ুর তিরুবনন্তপুরম জেলায় বেশ জনপ্রিয়।

উপকারিতা

হেলথ লাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস, নেট মেডস, উইকিপিডিয়া ও ন্যাচারাল আয়ুর্বেদ ওয়েব জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিলিম্বি-

সংক্রমণ রোধ করে: সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশি ও জ্বর নিরাময়ে বিলিম্বি অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অন্যান্য খনিজ উপাদান সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

ব্যথা দূর করে: যেকোনও ধরণের ব্যথা নিরাময়ে বিলিম্বির জুড়ি মেলা ভার। এতে রয়েছে ব্যথা উপশমে কার্যকরী ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় উপাদান।

আমাশয় ও পেটের ব্যথা নিরাময়: যারা দীর্ঘদিন ধরে রক্ত আমাশয়ে ভুগছেন, তাদের জন্য বিলিম্বি বেশ উপকারি একটি ফল। এটি হতে পারে প্রাকৃতিক ঔষধ। বিলিম্বির জুস অথবা পাতা রস করে খেলে উপকার পেতে পারেন।

কফ দূর করে: বয়স বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে অনেকের বুকে কফ জমে যায়। এই সমস্যা দূর করতে বিলিম্বি রস খেতে পারেন। এই ফলে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং খনিজ উপাদানগুলো খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: বিলিম্বিতে রয়েছে প্রচুর অ্যালজিক অ্যাসিড বা অক্সালিড। এই অ্যাসিড খাদ্যনালীর ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।

বমি থেকে মুক্তি: যাদের কারণে অকারণে বমি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তারা বিলিম্বি অথবা এর পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি পান করতে পারেন। বমির প্রবণতা কমবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে বিলিম্বি খুবই কার্যকরী। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্তরা বিলিম্বি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

ত্বক মসৃণ করে: কামরাঙ্গায় থাকা ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী দুটি উপাদান। নিয়মিত বিলিম্বি খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।

সতর্কতা:

গবেষকরা বলছেন, বিলিম্বি ফলে রয়েছে উচ্চ মাত্রার অক্সালেট। ফলে নিয়মিত বিলিম্বি রস পান করলে কিডনি স্বাস্ত্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ ছাড়া এটি দাঁতের মেলানিন ও হাঁড়ের ঘনত্বও কমিয়ে দেয়। কাজেই, বিলিম্বি ফল খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই পরিমিতি ও সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস, নেট মেডস ও উইকিপিডিয়া।

০৭ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৫৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।