প্রকতির উপহার অনন্য ওষুধ ‘শুষনি শাক’
প্রতিকী ছবি
প্রকৃতির সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলাদেশ। এ দেশের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জীবনধারনের নানা উপকারি উপাদান। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে খাদ্য ও চিকিৎসার উপকরণ। তেমনই একটি উপাদান ‘শুষনি শাক’। এটি খাদ্য হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি ভেষজ চিকিৎসার উপাদান হিসেবেও অনন্য। পুষ্টিগুণে ভরা শুষনি শাকের ভেষজ গুণাগুণ নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে শুষনি শাকে-
পরিচয়
শুষনি শাক বা 'সুষণি শাক' একটি ঔষধি উদ্ভিদ। এটি ইউরোপ, ক্যাউকাসিয়া, পশ্চিম সাইবেরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত, চীন, জাপান এবং ভিয়েতনামে পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও এটি সহজেই পাওয়া যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এটি আগাছা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শুষনি শাকের সাধারণ নাম হলো- four leaf clover; European waterclover, sushni ইত্যাদি। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনেকেই এটিকে সুষনি শাক বা সুনসুনি শাক বলে থাকেন। এই শাকের পাতা বেশ নরম ও পাতলা। শুষনি শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Marsilea minuta। ভেষজ চিকিৎসা ও শাক হিসেবে শুষনি শাক বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়।
পুষ্টিগুণ
জনপ্রিয় তথ্যকোষ ব্রিটানিকা, স্বাস্থ্যতথ্য বিষয়ক ওয়েব জার্নাল ন্যাচারাল মেডিসিন ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ধানক্ষেতে, পুকুরের পাড়ে এবং অন্যান্য জলাভূমিতে এই উদ্ভিদটি জন্মে। এই শাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, কপার। এতে আরও আছে আয়রন ও জিঙ্ক। যা মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে কার্যকরী।
ভেষজ ব্যবহার
তথ্যকোষ ব্রিটানিকা, স্বাস্থ্যতথ্য বিষয়ক ওয়েব জার্নাল ন্যাচারাল মেডিসিন, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন প্রকাশনা ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে-
♦ জ্বর নিরাময় করে: শুষনি শাক পুরনো জ্বর নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী। কুষ্ঠরোগ নিরাময়েও এই শাকের জুড়ি মেলা ভার।
♦ শ্বাসকষ্ট দূর হয়: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, শুষনী শাকের রস পরিমিত মাত্রায় গরম করে পান করলে শ্বাসকষ্ট দূর হয়।
♦ নিদ্রাহীনতা দূর করে: শুষনি শাক নিয়মিত খেলে নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়া রোগ নিরাময় হয়।
♦ শিশুর বিকাশে সহায়তা করে: গবেষকরা বলছেন, শিশুর মেধাবিকাশে টনিকের মতো কাজ করে শুষনি শাক। এই শাকে থাকা প্রাকৃতিক ও খনিজ উপাদানগুলো শিশুর মেধা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত চারমাস এই শাক শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
♦ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে: আধুনিক আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বলছে, কাঁচা শুষনি শাকের পাতা পিষে নিয়ে সেই রস পানি ও চিনিতে মিশিয়ে পান করলে দ্রুত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের জন্য এই শাক অত্যন্ত উপকারি।
♦ মাথা যন্ত্রণা কমায়: মাথা যন্ত্রণা কমাতে শুষনি শাকের জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত এই শাক খেলে মাথা যন্ত্রণার মতো রোগ দূর হয়।
অন্যান্য উপকারিতা
স্বাস্থ্যতথ্য বিষয়ক ওয়েব জার্নাল ন্যাচারাল মেডিসিন, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন প্রকাশনা ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, শুষনি শাক-
জণ্ডিস সারায়: শুষনি শাক জণ্ডিস নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। এটি যকৃতের সমস্যা দূর করে।
ওজন কমায়: শুষনি শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ, যা শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে সহায়তা করে। ফলে দেহের ওজন কমে।
কোলেস্টেরল কমায়: দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আপনি নিয়মিত শুষনি শাক খেলে দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ফলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও কমবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুষনি শাক বেশ কার্যকরী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই বেছে নিতে পারেন এই শাক।
ত্বক ভালো রাখে: এই শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের নীচে জমে থাকা ফ্রি-র্যাডিক্যাল কমাতে সহায়তা করে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
হজমশক্তি বাড়ায়: শুষনি শাক দেহের মেটাবলিজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি পেট পরিষ্কার রাখে। ফলে বদহজম ও অ্যাসিডিটির ঝুঁকি কমে।
হাড় মজবুত করে: শুষনি শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড় ও দাঁতে শক্তি যোগায়। বিশেষ করে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে এই শাক বেশি কার্যকরী।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে: যারা দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য দারুণ একটি উপাদান হতে পারে শুষনি শাক। এটি কয়েকদিন নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়।
তথ্যসূত্র: ব্রিটানিকা, ন্যাচারাল মেডিসিন হার্বস ও উইকিপিডিয়া।