• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভেষজ চিকিৎসার অনন্য উপাদান ‘যোয়ান’

ভেষজ চিকিৎসার অনন্য উপাদান ‘যোয়ান’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বাংলাদেশে ভেষজ চিকিৎসার পরিসর দিন দিন সীমিত হয়ে আসছে। কিন্তু একসময় ভেষজ বা ইউনানী চিকিৎসাই ছিল প্রধানতম চিকিৎসা। এখনো অনেকেই ইউনানী চিকিৎসার ওপর ব্যাপকভাবে আস্থাশীল। বিশে^র বিভিন্ন দেশে ইউনানী চিকিৎসা বেশ জনপ্রিয়। ইউনানী চিকিৎসায় মূলত ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপাদান সমূহ ব্যবহৃত হয়। তেমনই একটি গুণে মানে ভরা উপাদান ‘যোয়ান’। এটাকে কেউ কেউ ‘জোয়ান তামাক’ ও বলে থাকেন। এটি বেশ জনপ্রিয় একটি মসলা।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে যোয়ানে-

পরিচয়

যোয়ানের বৈজ্ঞানিক নাম Trachyspermum ammi। এটি মূলত Apiaceae পরিবারভুক্ত একটি ভেষজ উপাদান। মসলা ও ভেষজ ওষুধের উপকরণ হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়। ইতিহাস বলছে, ১৫৪৯ খৃষ্টাব্দের দিকে মিশর থেকে প্রথম ইউরোপে ঢুকেছিল যোয়ান। পরে ১৬৯৩ খৃষ্টাব্দে লন্ডনে প্রথম এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তবে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম যোয়ানের চাষ শুরু হয়। সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজস্থান, পশ্চিম বঙ্গ, তামিল নাড়ু, এবং হায়দ্রাবাদে বিপুল পরিমাণ যোয়ান আবাদ করা হয়। এছাড়া ইরান, আফগানিস্থান, মিশরে যোয়ানের চাষ হয়।

ওষুধিগুণ

প্রাচীনকাল থেকে ভারতে কারমেনেটিভ মিশ্রণ হিসেবে যোয়ানের ব্যবহার হয়ে আসছে। গ্রীকরাও কারমেনেটিভ মিশ্রণ হিসেবে যোয়ান ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে। প্রাচীন কাল থেকে যোয়ান আর্য়ুবেদ ওষুধিতে ব্যবহার হয়ে আসছে। ইউনানী শাস্ত্র মতে, যোয়ান থেকে অনেক মূল্যবান ওষুধ তৈরী হয়।

ভারতীয়রা ওষুধের সুগন্ধি হিসেবে যোয়ান ব্যবহার করে থাকে। যোয়ান জীবানুনাশক, ফ্রারিংজাইটস, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, আমাশয়, সর্দিজ্বর, আধকপালী মাথা ব্যথা, অর্শরোগ, পাতলা পায়খানা সাথে বমি, ঢেঁকুর উঠা, পেট ফাঁপা, বদহজম, ডায়াবেটিস, মুর্চ্ছা রোগ, অনিদ্রা, অনিয়মিত মাসিক, পুরাতন কাশি, পচা ঘা, ব্যবহার করা হয়। যোয়ানের পাতা ক্রিমিনাশক হিসেবে কাজ করে।

পুষ্টিগুণ

মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েব জার্নাল হেলথ লাইন ও ওয়েব এমডি বলছে, যোয়ানে রয়েছে প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেলস, ফাইবার, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি-সহ নানান খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম যোয়ানে রয়েছে-

ক্যালরি- ৩৬৩ ইউআই,
জলীয় অংশ- ৭.৪ শতাংশ,
পোটিন- ১৭.১ শতাংশ,
ফ্যাট- ২১.৮ শতাংশ,
মিনারেলস- ৭.৯ শতাংশ,
আঁশ বা ফাইবার- ২১.২ শতাংশ,
কার্বেহাইড্রেট- ২৪.৬ শতাংশ,
ক্যালসিয়াম- ১৫২৫ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ৪৪৩ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ১২.৫ গ্রাম,
ক্যারোটিন- ৭১ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন বি২- ২৮ শতাংশ।

যোয়ানের উপকারিতা

মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েব জার্নাল হেলথ লাইন, ওয়েব এমডি ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, যোয়ান খেলে-

কাশি নিরাময় হয়: যারা কাশিজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত অল্প পরিমাণে যোয়ান খেতে পারেন। এটি সর্দি কাশি নিরাময়ে কার্যকরী।

ম্যালেরিয়া জ্বর সারায়: গবেষকরা বলছেন, যোয়ান খেলে ম্যালেরিয়া জ্বরের শীতের প্রকোপ কম হয়, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে।

সর্দি দূর হয়: জোয়ান পিষে পেঁয়াজের রসের সঙ্গে মিশিয়ে শরীরে মালিশ করলে ঘাম বেরিয়ে সর্দির কষ্ট দূর হয়। এটি শরীর ও মনে ফুর্তি আনে। যোয়ান পিষে পুটলি তৈরি করে নাকে শুকলে সর্দি কমে যায়।

শ্বাস কষ্ট দূর করে: জোয়ান গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে শ্বাসের কষ্ট দূর হয়। যোয়ানের আরক খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

পেটের অসুখ নিরাময় করে: যোয়ান খেয়ে গরম পানি খান, এতে পেটের শূল ব্যথা কমে যাবে। এ ছাড়া এটি মুখে থুতুর আধিক্য, অজীর্ণ এবং বদ্ধ বায়ুর প্রকোপ উপশম হয়।

এসিডিটি দূর হবে: যোয়ান মাটির তাওয়ায় বা পাত্রে সেঁকে নিয়ে সম পরিমাণ বিট লবণ মিশিয়ে পিষে ফেলতে হবে। গরম জলের সঙ্গে এই চুর্ণ খানিকটা খেলে পেটের বায়ু দূর হয়।

আমাশয় ও বাত সারায়: গুড়ের সঙ্গে যোয়ান মিশিয়ে খেলে আমবাত সেরে যায়। এটি প্রাচীনকাল থেকে আমবাতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

প্রসূতির জন্য উপকার: আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র ও ইউনানী শাস্ত্র বলছে, যোয়ান খাওয়ালে প্রসূতির খিদে বেড়ে যায়। এই উপাদানটি খাবার হজম ও কোমরের ব্যথা কমাতে কার্যকরী।

ডায়াবেটিস কমায়: যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা যোয়ান ও তিল একসঙ্গে পিষে খেতে পারেন। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, ওয়েব এমডি ও উইকিপিডিয়া।

০৪ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।