• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করলা যেন প্রাকৃতিক চিকিৎসক

করলা যেন প্রাকৃতিক চিকিৎসক

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

সুস্থ থাকার জন্য দরকার সুষম খাবার। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম যেমন দরকার, তেমনি শাক-সবজি ও ফল-মূলও প্রয়োজনীয়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, সুস্থ শরীরের জন্য শাক-সবজি ও ফল-মূল সবচেয়ে কার্যকরি। প্রতিদিন খাবার তালিকায় শাক সবজি ও তাজা ফল বেশি রাখা জরুরি। আমাদের দেশে শীতকালে বেশি সবজি পাওয়া যায়। তবে সারা বছর যেসব সবজি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম সবজি ‘করোলা’। 

পুষ্টি উপাদান ও ভেষজ গুণে ভরপুর ‘করলা’ নিয়ে চলুন কিছু নতুন তথ্য জেনে নিই-

পরিচয়

করলা এক ধরণের ফল জাতীয় সবজি। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই সবজিটি করল্লা, উঁচ্ছা ও উঁচ্ছে নামে পরিচিত। ইংরেজিতে এটি Balsam pear, alligator pear, bitter gourd, bitter melon, bitter cucumber নামে পরিচিত। করলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia।

করলার গুণাগুণ

করলা তেতো স্বাদের একটি জনপ্রিয় সবজি। এতে রয়েছে নানা ধরণের পুষ্টি উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে

ক্যালরি ২৮ কিলোক্যালরি
জলীয় অংশ ৯২.২ গ্রাম
শর্করা ৪.৩ গ্রাম
আমিষ ২.৫ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম
আয়রন ১.৮ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন সি ৬৮ মিলিগ্রাম।

করলা খাওয়ার উপকারিতা

শ্বাসকষ্ট দূর করে : করলার রসে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভেষজ গুণাগুণ। যা অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা দূর করে।

হজমশক্তি বাড়ায় : করলার তেতো রস হজমশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক কার্যকরি। পানিতে করলার রস ও মধু একসঙ্গে মিলিয়ে খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

গলার প্রদাহ দূর হয় : অনেকেই গলার প্রদাহ ও গলা ব্যথায় ভুগে থাকেন। তাদের জন্য করলার রস হতে পারে প্রাকৃতিক প্রতিষেধক। করলার রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে গলা ব্যথা দূর হবে।

যৌবন ধরে রাখে : নিয়মিত করলার খাওয়ার অভ্যাস আপনার যৌবন অটুট রাখতে সহায়তা করবে। কারণ করলা উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়া এতে থাকা তেতো রস কৃমিনাশক। সব মিলিয়ে যৌবন শক্তি ধরে রাখতে করলা সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

রক্তশূন্যতা দূর করে : যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত করলা খান। কারণ এতে থাকা ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে কাজ করে।

সংক্রমণ প্রতিহত করে : জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি ও সাধারণ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে করলার গুরুত্ব অনেক। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি সম্মিলিতভাবে শরীরে রোগ সংক্রমণ প্রতিহত করে।

ত্বক ও চুলের যত্নে : করলায় রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। এই উপাদানগুলো আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নে খুবই কার্যকরি।

শক্তিবর্ধক : করলার রস অত্যন্ত শক্তিবর্ধক একটি উপাদান। এটি আমাদের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ঘুমে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : করলার অন্যতম উপকারি দিক হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা নিয়মিত করলার তরকারি, করলা ভাজি অথবা করলা সেদ্ধ করে খান, তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া করলার তেতো রস আমাদের শরীরের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ করে : করলার রস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন রকম রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করুন।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : করলায় রয়েছে আয়রন, ভিটামিন এ, সি এবং আঁশ। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে রোধে লুপিন ও লাইকোপেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : রক্তে মিশে থাকা চর্বি বা ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) কমাতে করলার রস ব্যাপক কার্যকরি। করলার রস রক্তে ভালো কোলেস্টেররের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রুচিবর্ধন করে : খাবারে অরুচি ভাব দূর করতে করলার জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া অপুষ্টিজনিত কারণে সৃষ্ট অরুচি ভাব দূর করতেও করলা বেশ কার্যকর। এক চা-চামচ করলা রস সকাল ও বিকালে নিয়মিত খান, উপকার পাবেন।

পরামর্শ

করলা অত্যন্ত উপকারি একটি সবজি। এটি তেতো স্বাদের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন, তারা করলা খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিত খাবেন।

এবি/এসএন

০৮ আগস্ট ২০২১, ০৭:৪৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।