• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

হাজার হাজার পাখির সঙ্গে যে প্রেম ভারতীয় জোসেফের

হাজার হাজার পাখির সঙ্গে যে প্রেম ভারতীয় জোসেফের

ফিচার ডেস্ক

প্রতিদিন চার হাজার টিয়াপাখির দু’বেলা খাবার খাওয়ানো চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। নিঃস্বার্থে কেউ এমন কাজ করে? তবে বিস্ময়কর পৃথিবীতে ব্যতিক্রমী মানুষের তো অভাব নেই। পৃথিবীতে কত ভাবনার মানুষ যে আছে, তার শেষ নেই। তেমনই একজন ব্যতিক্রমী মানুষ জোসেফ সেকার।

কে এই জোসেফ সেকার

ভারতের চেন্নাইয়ে বসবাসকারী জোসেফ সেকার একজন পেশাজীবী। চেন্নাই শহরের একটি মধ্যবিত্ত আবাসিক এলাকায় তিনি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। জোসেফের ভাষা তামিল। তিনি সামান্য ইংরেজিও বলতে পারেন। মানবিক এই মানুষটি প্রতিদিন অন্তত ৪ হাজার পাখির খাবারের ব্যবস্থা করেন। নিজ বাড়িতে তিনি পাখিদের দু’বেলা খাওয়ান। তাঁর এই কাজ এরই মধ্যে ভারত ছাপিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে।

যে কারণে পাখিদের খাওয়ান জোসেফ

একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে জোসেফ জানিয়েছেন, প্রকৃতির একটি অন্যতম অনুষঙ্গ পাখি। সমুদ্র ও নদী অববাহিকায় পাখিরা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং জীবন কাটায়। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস বেশি হয়। পাখিরা তাদের ঘর হারায়। খাবার পায় না নিয়মিত।

২০০৪ সালে ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। সুনামির সেই আঘাতে চেন্নাইয়ের অনেক মানুষ মারা যান। প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ে পাখিদের ঘর ভেঙে যায়। খাবারের অভাবে হাজার হাজার পাখি মারা যায়। সেসময় বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে জোসেফকে। তখন থেকেই জোসেফ নিজ উদ্যোগে নিয়মিত পাখিদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেন।

পাখিদের খাওয়াতে যা যা হয়

২০০৪ সালে যখন প্রথম পাখিদের খাবার দিতেন জোসেফ, প্রথম দিন পাখি ছিল ৪ টি। পরের দিন ওই চারটি পাখির সঙ্গে আরও কিছু পাখি আসে। এভাবে পাখির সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ৪ হাজারে পৌঁছেছে।

— প্রতিদিন সকাল ও বিকালে অন্তত ৪ হাজার পাখি জোসেফের বাসার ছাদে চলে আসে।

— পাখিরা আসার আগেই জোসেফ ছাদে লম্বা কাঠের ওপর খাবার বিছিয়ে রাখেন।

— মুহূর্তেই চেন্নাইয়ের মধ্যবিত্ত একটি মহল্লার আকাশ পাখির কিচির মিচিরে ভরে যায়।

— পাখিদের ভেতর টিয়াপাখির সংখ্যা বেশি, তবে অন্যান্য পাখিও আসে।

— প্রতিদিন পাখিদের দু’বেলা খাবারের জন্য ৭৫ কেজি চাল প্রয়োজন হয়।

— খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে জোসেফ বাজার থেকে চাল কিনে তা সেদ্ধ করে ছাদে থাকা কাঠের ওপর বিছিয়ে দেন।

পাখিদের খাওয়ানো নিয়ে জোসেফের ভাবনা

জোসেফ মনে করেন, প্রকৃতি সুন্দর হয় হাজারো প্রাণের সঞ্চারে। গাছগাছালি, পাখ-পাখালি, পাহাড়-সমতল, সাগর-নদী, মানুষ কিংবা প্রাণীকুলের অন্য সকলে মিলেই পূর্ণতা পায় প্রকৃতি। প্রকৃতি থেকে এখন নানা জাতের পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। মনুষ্যসৃষ্ট নানা উৎপাতে প্রকৃতি হারাচ্ছে নিজস্বতা।

পাখিদের খাওয়ানোর মাঝে নিজের কৃতিত্বের দাবি না করে জোসেফ সকল কৃতজ্ঞতা দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তাকে। জোসেফের মত মানবিক মানুষ বেঁচে আছে বলেই পৃথিবী এখনও ফুল-ফলে সুশোভিত।

৩০ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৩এএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।