গরমে সেরা পাঁচ 'ফলের জুস’

প্রতিকী ছবি
ফল সবার কাছেই প্রিয়। ফলের জুস হলে তো কথাই নেই। কাঁচা ফল খাওয়ার স্বাদ এক রকম। তবে টাটকা ফলের জুসের স্বাদ যেন অমৃত। প্রায় অধিকাংশ ফল দিয়েই জুস বানানো যায়। তবে বাজারে যেসব ফল সব সময় পাওয়া যায়, সেসব ফল দিয়েই বেশি জুস করা হয়। গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ও সুস্বাস্থ্যের জন্য জুস দারুণ এক পানীয়। আপেল, আঙুর, বেদানা কিংবা বিট, নানান ফলের জুস শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।
যেসব ফলের জুস সেরা
জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইনে ৯টি সেরা ফলের জুস নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কমলা, বেদানা, বিট, অ্যাভোকাডো, পেঁপেঁ ইত্যাদি।
আপেল জুস
পুষ্টিবিদরা বলছেন, একটি মাঝারি আকারের আপেলে (আনুমানিক ১৮২ গ্রাম) রয়েছে ক্যালোরি- ৯৫ শতাংশ। এ ছাড়া এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ২৫ গ্রাম, ফাইবার ৪ গ্রাম, ভিটামিন সি প্রায় ১৪%, পটাসিয়াম ৬%, ভিটামিন কে ৫%, ম্যাঙ্গানিজ, তামা এবং ভিটামিন এ, ই, বি-১, বি-২ এবং বি-৬ রয়েছে। আপেল পলিফেনলের একটি সমৃদ্ধ উৎস।
উপকারিতা
আপেলের জুসে প্রচুর ফাইবার এবং পানি রয়েছে। ফলে অল্প খেলেই পেট ভরে যায়। গবেষকদের ধারণা. আপেল সহজে পেট ভরিয়ে দিলেও এতে তুলনামূলক কম ক্যালোরি থাকে। কাজেই আপেলের জুস ওজন কমানোর জন্য উপযোগী।
আঙুর
আঙুরের রঙ কালো, নীল, সোনালী, সবুজ, বেগুনি-লাল, বা সাদা হতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম আঙুরে রয়েছে ক্যালরি ২৮৮ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ১৮.১ গ্রাম, চর্বি ০.১৬ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ০.৪৬৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৩.২ মিলিগ্রাম। এতে আছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৩৬ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৭ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম ও জিংক।
উপকারিতা
আঙুরের জুস রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা কমায়। এতে টরোস্টেলবেন নামে এক ধরনের যৌগ থাকে যা কোলস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি অ্যাজমার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া বদহজম, মাথাব্যথা, চোখের রোগ, কিডনি রোগ, ত্বকের বলিরেখা ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় আঙুরের জুস।
অ্যাভোকাডো
সালাদ হিসেবে অ্যাভোকাডোর জুড়ি মেলা ভার। তবে এটি জুস হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, অ্যাভোকাডোতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট।
উপকারিতা
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় অ্যাভোকাডো। এ ছাড়া অ্যাভোকাডোর জুস হজমশক্তি উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাশাপাশি এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত অ্যাভোকাডো জুস খেতে পারেন। এ ছাড়া এই জুস দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং চুল ও ত্বক ভালো রাখে।
টমেটো
টমেটোতে রয়েছে বহুমুখী পুষ্টি উপাদান। দামে সস্তা ও সব সময় টমেটো পাওয়া যায়। টমেটো সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। তবে এটি দিয়ে জুসও বানানো যায়। পুষ্টিবিদরা বলছেন, টমেটোতে পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-এ, বিটাক্যারোটিন, লাইকোপেন, ফলিক অ্যাসিড, শর্করা ও পানি থাকে।
উপকারিতা
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েব জার্নালে বলা হয়েছে, টমেটো ভিটামিন-সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এই উপাদানগুলি দেহে ফ্রি-রেডিক্যাল তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। টমেটো জুস চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং হার্ট ভালো রাখে। এ ছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, দাঁতের মেলানিন উন্নতকরণসহ নানা ভাবে শরীরকে সহায়তা করে।
বিটরুট জুস
বিটরুট একটি সবজি। তবে এটি দিয়ে জুস বানানো যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিটরুটের জুস বেশ জনপ্রিয়। বিটরুটে রয়েছে প্রচুর জলীয় অংশ। প্রতি ১০০ গ্রাম বিটরুট জুসে রয়েছে- ক্যালরি ৪৩ শতাংশ, জলীয় অংশ ৮৮ শতাংশ, প্রোটিন ১.৬ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯.৬ গ্রাম, সুগার ৬.৮ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ২.৮ গ্রাম এবং চর্বি ০.২ গ্রাম। এ ছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্লোরিন, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান।
উপকারিতা
বিটরুট জুসে রয়েছে পর্যাপ্ত নাইট্রেটস, যা মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। এ ছাড়া বিটরুট জুস লিভার ভালো রাখে। এটি ঋতুচক্র সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে। ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে রাখে বিটরুট। এটি আয়রনের ঘাটতি পুরণ এবং পেশি মজবুত করে। এটি বার্ধক্যের ছাপ দূর করে।
তথ্যসুত্র: হেলথ লাইন ও ওয়েবএমডি।