• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাছড়া প্রজাতির ‘সর্পগন্ধা’র গুণাগুণ

গাছড়া প্রজাতির ‘সর্পগন্ধা’র গুণাগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

রোগ নিরাময়ে কার্যকরী দারুণ এক উদ্ভিদ ‘সর্পগন্ধা’। যার নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে কার্যকারিতা। সর্পগন্ধা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অত্যন্ত উপকারি একটি উদ্ভিদ। এটি নানা ভেষজ গুণাগুণ সমৃদ্ধ। বিশেষ করে, সাপে কাটা রোগীর সুস্থতায় এই উদ্ভিদ খুবই কার্যকরী। এ ছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, সংক্রমণ প্রতিরোধ, অনিদ্রা, অবসাদ ও হিস্টিরিয়ার মতো রোগ নিরাময়ে এই উপাদানটির জুড়ি মেলা ভার।

সর্পগন্ধায় রয়েছে নানান রাসায়নিক উপাদান। সুপ্রাচীনকাল থেকে এই উপাদানটি ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রিয় পাঠক, প্রকৃতির সেরা দান সর্পগন্ধার উপকারিতা ও এটি ব্যবহারের কিছু দিক সম্পর্কে জানাতে আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন দেখে নেয়া যাক-

পরিচয়

সর্পগন্ধা আমাদের দেশে সর্পাদনী, সর্পক্ষী প্রভৃতি নামে পরিচিত। এটির বৈজ্ঞানিক নাম রাউলভলফিয়া সার্পেন্টিনা (Rauwolfia sarpentina)। সর্পগন্ধা মূলত Apocynaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। ভেষজ চিকিৎসায় সর্পগন্ধা সুপ্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।

এই গাছে প্রথমে সবুজ ফল ধরে। পরে ফল পাকলে তা বেগুনী-কালো রঙ ধারণ করে। কাঁচা মূলের গন্ধ কাঁচা তেঁতুলের মতো। সর্পগন্ধা ফুল গ্রীস্মকালে ফোঁটে ও বর্ষাকালে এর ফল পাকে। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, নেপাল, ভূটান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় এই উদ্ভিদটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামে এই উদ্ভিদ বেশি পাওয়া যায়।

ওষুধি গুণাগুণ

জনপ্রিয় ওয়েব জার্নাল ওয়েব এমডি, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, সর্পগন্ধার শিকড়ে বা মূলে রয়েছে ইনডোল এলকালয়েডের মতো উপাদান। এ ছাড়া এতে রয়েছে রিসারপিন, ডিসারপিন ও রেসিনামিনের মতো রাসায়নিক যৌগ।

পাশাপাশি সর্পগন্ধায় রয়েছে আজমলীন, আজমালিসিন, সার্পেটাইন, অলিরোসিন ও আনস্যারচুরেটিড এলকোহল। এসব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, উন্মাদ বা মস্তিষ্ক বিকৃতি ও হিস্টিরিয়া রোগের নিরাময়ে খুবই কার্যকরী।

উপকারিতা ও ওষুধি ব্যবহার

স্বাস্থ্যবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েব জার্নাল হেলথ বেনিফিট টাইমস, ওয়েব এমডি, আয়ুর্বেদ প্ল্যানেট, ইন্ডিয়া টাইমস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, সর্পগন্ধা-

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: প্রকৃতির অপার দান সর্পগন্ধা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম সর্পগন্ধার মূল চূর্ণ প্রতিদিন ১ থেকে ২ বার পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

অনিদ্রা ও অবসাদ দূর করে: অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়ায় যারা ভুগছেন, তারা কয়েকদিন নিয়মিত সর্পগন্ধা সেবন করতে পারেন। এতে অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর হবে। এক্ষেত্রে দুই থেকে আড়াইশ মিলিগ্রাম পানিতে সর্পগন্ধার মূল চূর্ণ মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

হিস্টিরিয়া রোগ সারায়: বর্তমানে হিস্টিরিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি একধরণের মানসিক সমস্যাও বটে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দুই থেকে আড়াইশ মিলিগ্রাম সর্পগন্ধার মূল চূর্ণ চিনি বা মধূতে মিশিয়ে খেতে হবে। দিনে দুইবার এই মিশ্রণটি খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

হজম শক্তি বাড়ায়: গবেষকরা বলছেন, হজম ক্ষমতা বাড়াতে সর্পগন্ধা খুবই কার্যকরী। এতে থাকা খনিজ উপাদান ও ফাইবার পেটের নানাবিধ সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ফলে হজমশক্তি বাড়ে।

উন্মাদনা ও অবসাদ দূর করে: মানসিকভাবে যারা উন্মাদ ও অবসাদগ্রস্থ তারা সর্পগন্ধা খেতে পারেন। দুধ অথবা চিনির সঙ্গে আড়াইশ মিলিগ্রাম সর্পগন্ধার মূল চূর্ণ মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

পেটের সমস্যা নিরাময় করে: অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা, বদহজমসহ পেটের নানা রোগ নিরাময়ে সর্পগন্ধার জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত প্রতিদিন সকালে সর্পগন্ধা চূর্ণ পানি অথবা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

বিষক্রিয়া নষ্ট করে: বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থতায় সর্পগন্ধা অনন্য। এটি সাপে কাটা রোগীর হৃদযন্ত্রের সাভাবিক ক্রিয়া সচল রাখে। ফলে সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কাও কমে যায়।

ডায়রিয়া ও আমাশয় নিরাময় করে: সর্পগন্ধা মূলের নির্যাস পেটের ব্যথা, ডায়রিয়া, আমাশয় ও জ্বর সারাতে খুবই কার্যকরী। এটি সুপ্রাচীনকাল থেকে ভেষজ চিকিৎসায় প্রমাণিত।

তথ্যসূত্র- হেলথ বেনিফিট টাইমস, ওয়েব এমডি, আয়ুর্বেদ প্ল্যানেট ও উইকিপিডিয়া।

২১ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।